‘কৃষিজমি সুরক্ষা আইন প্রণয়নের আহ্বান’ -ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল

‘ভূমিগ্রাসীদের অপতৎপরতা বেড়েই চলেছে। দখলে ও অপরিকল্পিত নগরায়নে কৃষি জমি হারাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে কৃষকরা। কৃষিকে বাঁচাতে হলে চাষযোগ্য জমি যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে। নইলে খাদ্য নিরাপত্তা নিদারুণ হুমকির মধ্যে পড়বে। কোন প্রভাবশালী গোষ্ঠী তাদের ছাউনি বানানোর জন্য সাধারণ মানুষের জমি দখল করতে না পারে এ জন্য সবাইকে সতর্ক হতে হবে।’ গতকাল দুপুরে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), টিআইবি ও বেলাসহ ৮টি সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত সাধারণ নাগরিকদের জমি দখল ও দোষীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশে ভূমি দখলের যে নৈরাজ্য চলছে এতে রাষ্ট্র ও সরকার কোনভাবেই দায় এড়াতে পারে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়িক স্থাপনা, নগরায়ন, আবাসিক ও সরকারি প্রকল্পের কারণে দিন দিন ভূমি দখল হয়ে যাচ্ছে। এই সব জমির মালিক সরকার কিংবা সাধারণ মানুষ যেই হোক না কেন তা সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতিমালার লঙ্ঘন। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও হয়রানির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা কোন উন্নয়নের বিরুদ্ধে নই। পরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের পক্ষে আমরা। তবে সেই উন্নয়ন নগরায়ন, শিল্পায়ন ও প্রতিরক্ষা হতে হবে উর্বর কৃষি জমিকে রক্ষা করে, সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা করে। অধিকার হরণ করে নয়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)’র পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, দেশে যে ভাবে ভূমিদস্যুরা সাধারণ মানুষের জমি দিনের পর দিন দখল করে নিচ্ছে সেখানে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা আছে বলে আমার মনে হয় না। ভূমিহীনরা কোথায় যাবে? তারা কি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে ডুবে মরবে? তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বার বার ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু ভূমিগ্রাসীদের অপতৎপরতা রোধে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি না- যা দেশের সচেতন নাগরিকদের ভাবিয়ে তুলেছে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)-এর পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, যারা দুর্বৃত্তদের হাতে জমি হারাচ্ছেন তারা হয়রানির ভয়ে আদালতে মামলা করতে পারছেন না। আদালত থেকেও এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা আসছে না। মামলা করলে প্রভাবশালীদের দাপট আর অত্যাচারে তারা দখল হয়ে যাওয়া জমির বিষয়ে একেবারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এইভাবে একটি সমাজ ব্যবস্থা চলতে পারে না। কৃষি জমি সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে কৃষি জমি সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং তার দ্রুত বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
নিজেরা করি’র পরিচালক মানবাধিকার কর্মী খুশি কবীর বলেন, রাষ্ট্র, ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের জন্য যা করা দরকার তা করুক। এতে দেশের লাভ হবে। এখানে কারও কিছু বলার নেই। কিন্তু, দেশের মানুষের অধিকার হরণ করে যেসব উন্নয়নের নামে ভূমি দখলের মহাউৎসব চলছে এটি কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এদের রুখতে হবে। তারা দেশ ও জাতির গণশত্রু।
তৃণমূল থেকে আসা  নোয়াখালীর দক্ষিণ হাতিয়ার চর ক্যারিং থেকে আসা রহিমা বেগম বলেন, আমাদের অনেক চাষাবাদের জন্য জমি ছিল। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বেশির ভাগ জমি দখল করে নিয়েছে। তাদেরকে আমাদের জমি ফেরত দেয়ার কথা বললে তারা আমাদের বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেয়। সংবাদ সম্মেলনে এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সদস্য এডভোকেট সামিউল আলম সরকার ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) প্রতিনিধি এসএম মিজানুর রহমান প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.