গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো হবে

বেইজিংয়ের গ্রেট হলে গতকাল সংবাদ সম্মেলনের সময়
করমর্দন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা
(বাঁয়ে) ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাস নিঃসরণ রোধে ‘ঐতিহাসিক’ এক চুক্তি করেছে দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এই চুক্তির আওতায় গতকাল বুধবার একটি কর্মপরিকল্পনাও ঘোষণা করা হয়েছে। পরিবেশবিজ্ঞানীরা একে স্বাগত জানালেও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি একে ‘কর্মসংস্থান হত্যাকারী’ চুক্তি বলে আখ্যা দিয়েছে। খবর বিবিসি ও এএফপির। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোট—অ্যাপেকের সম্মেলনে দুই দেশের শীর্ষ নেতারা গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ রোধে তাঁদের অঙ্গীকারের কথা ঘোষণা করলেন। আগামী বছর প্যারিসে জলবায়ু নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনায় বসার আগে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী শীর্ষ দুই দেশের এই ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী শীর্ষ দেশ ছিল দ্রুত শিল্পায়িত হয়ে ওঠা চীন। দেশটি মোট নিঃসৃত গ্যাসের ২৯ শতাংশের জন্য দায়ী। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে এখন নিঃসৃত হয় ১৫ শতাংশ গ্যাস। এ গ্যাসগুলো চাষের জন্য ব্যবহৃত গ্রিনহাউস নামের আচ্ছাদনের মতো বায়ুমণ্ডলের তাপ আটকে রাখে বলে এগুলোকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০২৫ সালের মধ্যে তাঁর দেশের গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ ২০০৫ সালের তুলনায় ২৬ শতাংশ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনার নতুন লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করেছেন। বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ওয়াশিংটনের নতুন এই লক্ষ্যমাত্রার কথা জানান। চীন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঘোষণা না করলেও ২০৩০ সালের মধ্যে নিঃসরণ কমিয়ে আনার পক্ষে দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঘোষণা না করায় চীনের সমালোচনা করেছেন ওবামা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনের সঙ্গে যৌথ ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক মতৈক্য’ বলে অভিহিত করেন। এই মতৈক্য ‘চীন-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্যতম মাইলফলক’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্যারিসের আন্তর্জাতিক আলোচনায় যাতে মতৈক্য হয়, সে বিষয়েও একমত হয়েছেন তাঁরা। জিনপিং ও ওবামা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সামরিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একযোগে কাজ করতে সম্মতির কথা জানান। সামরিক সংঘর্ষ এড়াতেও চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়েছে বলে জানান তঁারা। তবে সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু বিষয়ে মতপার্থক্যও ফুটে ওঠে। ওবামা জানান, তিনি মানবাধিকার উন্নয়ন ও সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জিনপিংকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে ওবামা বলেন, হংকংয়ে অবাধ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সেখানকার আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হাত নেই। এ বিষয়ে জিনপিং বলেন, হংকংয়ের আন্দোলন চীনের একেবারেই অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ছাড়া পূর্ব চীন সাগরে সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে চীনের যে দ্বন্দ্ব চলছে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়েছেন ওবামা। এদিকে ওবামার জলবায়ুবিষয়ক লক্ষ্যমাত্রাকে ‘অবাস্তব পরিকল্পনা’ আখ্যা দিয়ে তাঁর কঠোর সমালোচনা করেছেন রিপাবলিকান নেতারা। মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, ‘এটা অবাস্তব পরিকল্পনা। প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর উত্তরসূরিকে অকর্মণ্য হিসেবে দেখানোর আয়োজন করছেন। ঘোষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে অসংখ্য চাকরি কমে যাবে।’

No comments

Powered by Blogger.