চট্টগ্রামে শিপিং অফিসে ছাত্রলীগের তাণ্ডব

চট্টগ্রাম বন্দরে আসা দেশী-বিদেশী জাহাজের পরিত্যক্ত তেলের জন্য একটি শিপিং অফিসে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে ছাত্রলীগ নেতার্মীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে গ্লোব লিংক অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড নামে শিপিং অফিসে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অফিসের নিচের সড়কে কয়েকশ কর্মী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বন্দর থানা ছাত্রলীগের ব্যানারে অবস্থান নেন। ছাত্রলীগের মহড়ার কারণে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ওই অফিসে ঢুকে কর্মকর্তাদের গালিগালাজের পাশাপাশি হুমকি-ধমকি দেন এবং মারধরের চেষ্টা করেন। এছাড়া কর্মকর্তাদের জিম্মি করে একটি জাহাজের পরিত্যক্ত তেলের অর্ডারও আদায় করে নেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত আগ্রাবাদে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ভবনের নিচের সড়কে এক ঘণ্টা ধরে এ তাণ্ডব চললেও পুলিশ ছিল কার্যত দর্শকের ভূমিকায়। স্থানীয়রা জানান, সড়কে বন্দর থানা ছাত্রলীগের ব্যানারে প্রায় ২০০ বিভিন্ন বয়সের যুবক দাঁড়িয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে স্লোগান দেন। তাদের ডান হাতে লাল কাপড় বাঁধা ছিল। অধিকাংশ যুবকের হাতে ছিল হকিস্টিক, ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প, লাঠি, বড় রামদা এবং কিরিচ। নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের নেতৃত্বে প্রায় ৫০-৬০ নেতাকর্মী শিপিং অফিসে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।পুলিশ ও শিপিং অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহাজের পরিত্যক্ত তেল ও বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন ছাত্রলীগ নেতা জাকারিয়া দস্তগীর। বিভিন্ন সময় তিনি আগ্রাবাদে বিভিন্ন শিপিং অফিসে ঢুকে পরিত্যক্ত তেলের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। সম্প্রতি গ্লোব লিংক ছাত্রলীগের আরেক নেতা নওশাদ পিন্টুকে একটি জাহাজের পরিত্যক্ত তেল সংগ্রহের অর্ডার দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন জাকারিয়া। পরে দলবল নিয়ে জাকারিয়া ওই অফিসে যান ২ বছরের জন্য তাদের অধীনে আসা সব জাহাজের পরিত্যক্ত তেল সংগ্রহের আদেশ আদায় করতে। জাকারিয়া স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু গ্লোব লিংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোবাহান এ সময় জাকারিয়াকে জানান, বিষয়টি আইনবহির্ভূত হবে। যে জাহাজ বন্দরের সীমানায়ও আসেনি সেই জাহাজের পরিত্যক্ত তেল সংগ্রহের আদেশ তিনি দিতে পারেন না।বন্দর থানার এসআই এনাম আহমেদ জানান, জাহাজের তেল সংগ্রহ এবং বিভিন্ন কাজ নিয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের একটি গ্রুপ শোডাউন দিয়েছে। আমরা আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকায় সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু তেমন কিছু হয়নি।জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, শিপিং অফিসে গিয়ে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ মিথ্যা। আমরা ওই অফিসের সামনে সবসময় আড্ডা মারি। আমি সেখানে কোনো কাজের জন্য যাইনি। আপনাদের কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা কেন অবস্থান নিয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মহিউদ্দিন ভাইয়ের আহ্বানে সাইফ পাওয়ার টেকের বিরুদ্ধে মিছিল করেছিলাম। যেখান থেকে মিছিল বের করেছিলাম সেখানে সব শিবিরের মেস। তারা হামলা চালাতে পারে এজন্য লাঠিসোঠা নিয়েছিলাম।

No comments

Powered by Blogger.