খুলনাঞ্চলের অর্ধেক গাড়িই ফিটনেসবিহীন by রাশিদুল ইসলাম

খুলনাঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তালিকা লম্বা হচ্ছে। অনুমোদন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ ও অপেশাদার চালক দ্বারা গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ব্যবস্থা, ট্রাফিক বিভাগের অদূরদর্শিতা এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের দুর্নীতির কারণে এমনটি ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মহাসড়ক শুধু নয়, বিভাগীয় শহর খুলনায় নগর পরিবহনের জরাজীর্ণতা ও লক্কড়-ঝক্কড় ট্রাকগুলো দুর্ঘটনায় পড়ছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ এ অঞ্চলের ৫০ শতাংশের বেশি ফিটনেসবিহীন গাড়িই এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। আর এ কারণেই অনুমোদন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে বিআরটিএ ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ একে অপরের ওপর দোষারোপ করছে। বাংলাদেশে রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত তাদের কাছে আসা ৫২ শতাংশ গাড়ির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাকি ৪৮ শতাংশ গাড়ির অনুমোদন দেয়া হয়নি। সে হিসাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ এ অঞ্চলের মোট গাড়ির পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ। ২০১০ সাল পর্যন্ত খুলনা বিআরটিএ থেকে অনুমোদন দেয়া গাড়ির পরিমাণ ৫৯ হাজার ৮৭৬টি। পরের বছর ২০১১ সালে ১০ হাজার ২৩৫টি গাড়ির অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু গত বছর সব জরিমানা মওকুফ করে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে বিপুলসংখ্যক মালিক এ সুযোগটি গ্রহণ করেছেন। ফলে ৭৫ শতাংশ থেকে কমে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা ৫০ শতাংশে নামে। তবে, বেসরকারি হিসাব মতে এর সংখ্যা আরও বেশি। আর এ বৃহৎসংখ্যক অনুমোদনহীন ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল করার কারণে। অদক্ষ চালকের কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ১২ই অক্টোবর দুর্ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে, খানজাহান আলী (রহ.) সেতুর পূর্বপাড়ে ফারুক জুট মিলের সামনের সড়কে দু’টি যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে ৫ জন আহত হন। এর একদিন আগে ১০ই অক্টোবর দুপুরে নগরীর খালিশপুরস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের সামনে বিআরটিসি ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হন। এ দু’টি দুর্ঘটনার জন্য অদক্ষ চালকদেরই দায়ী করেন যাত্রীরা। সর্বশেষ বয়রাস্থ মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন সংলগ্ন মহাসড়কে কনস্টেবল প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী গড়াই পরিবহনের একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, চলমান দুর্ঘটনার মধ্যে ৩৭ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে জাতীয় মহাসড়কে, ১২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে এবং ১৫ শতাংশ শাখা সড়কে। খুলনা-কয়রা ও খুলনা থেকে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তাটি অধিকাংশ জায়গা গাড়ি চলাচলের জন্য মরণফাঁদ। ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে ডুমুরিয়া থেকে চুকনগরের পূর্ব পর্যন্ত সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত অধিকাংশ জায়গা গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী। এদিকে খুলনা-পাইকগাছা ও কয়রার ১০০ কিলোমিটার সড়কটি রয়েছে বেহাল দশায়। একই চিত্র খুলনা থেকে বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী খুলনা থেকে যশোর ঢাকা সড়ক। এসব সড়কের দুর্ঘটনা প্রতিবছর কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তি মারা যান। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) খুলনার সহকারী পরিচালক এএসএম কামরুল হাসান বললেন, খুলনাঞ্চলে ১৮ লক্ষাধিক মোটরযান রয়েছে। গত বছর সব জরিমানা মওকুফ করায় গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের সুযোগটি মালিকরা গ্রহণ করেন। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ যানবাহনে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে। তবে অধিকাংশ গাড়ি এখনও ফিটনেসবিহীন রয়েছে। তবে, অনুমোদন ছাড়া অসংখ্য গাড়ি রয়েছে যেগুলো শনাক্ত করার দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের। ত্রুটিপূর্ণ গাড়ির জন্য সড়ক দুর্ঘটনা বাড়লে সে দায়ভার আমাদের নয়। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী (ট্রাফিক) কমিশনার মো. কলিম উল্লাহ বলেন, মহানগরীতে অনুমোদনহীন গাড়ি চলতে দেয়া হয় না। ফিটনেস ও অদক্ষ চালকদের সম্পর্কে বিআরটিএ দেখবে। জানি না, তারা কিভাবে ফিটনেসবিহীন গাড়ির ও অদক্ষ চালকদের সার্টিফিকেট দেন।

No comments

Powered by Blogger.