ম্যান বুকার পুরস্কার নিতে এসে রিচার্ড ফ্ল্যানাগান যা বললেন

অস্ট্রেলিয়ায় ম্যান বুকার পুরস্কারকে ভাগ্যের লটারি হিসেবে দেখা হয়। আমি ভাবিনি, শেষ পর্যন্ত সেই সৌভাগ্যবান আমি হব।
প্রকৃতপক্ষে আমি কোনো সাহিত্যিক পরিবেশ থেকে আসিনি। পৃথিবীর শেষ প্রান্তের একটি দ্বীপের বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় অঞ্চলের জঙ্গলে অবস্থিত অতি ক্ষুদ্র একটি শহর থেকে আমি এসেছি। আমার দাদা-দাদির ছিল না প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। আমি কখনও এতটা উচ্চাশা করিনি যে আপনাদের সামনে এতটা মর্যাদার সঙ্গে লন্ডনের এই প্রধান সভাকক্ষে একজন লেখক হিসেবে দাঁড়াতে পারব।
আমি আপনাদের সামনে উপন্যাস বিষয়ে যুগের দুঃখবাদ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। এগুলো আমাদের আধ্যাত্মিক, নান্দনিক ও মেধাবী গল্পগুলোর অন্যতম। এই গল্পগুলো এমন যা আমাদের স্বতন্ত্র করে তুলেছে। এই গল্পগুলোর যে কোনোটির চূড়ান্ত প্রকাশই উপন্যাস।
বিষয়ই উপন্যাস নয়। উপন্যাস জীবনের দর্পণও নয়, নয় জীবনের দিক-নির্দেশক।
উপন্যাসই জীবন অথবা তা কিছুই নয়।
আমি বিচারকমণ্ডলীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই এই জন্য যে, তারা বহু লব্ধপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে আমার গ্রন্থকে নির্বাচিত করেছেন। এটা আমার জন্য বিরাট সম্মানের ব্যাপার। আমি আমার ইংরেজ প্রকাশক ক্লারা ফার্মার এবং তার দলকেও সাধুবাদ জানাই।
আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই আমার টেবিলের পাশের আসন অলঙ্কৃত করে বসা দুজন গুরুত্বপূর্ণ নারীকে। তাদের একজন আমার প্রিয়তমা মাজদা। একজন লেখক হওয়া মানে মানবতার অনন্ত পথে যাত্রা। এই পথে অনেক বড় বড় বাঁধা আসে। সফলতার এই বিরল মুহূর্ত আমি মাজদার সঙ্গে উদযাপন করতে পেরে আনন্দিত; যিনি আমার সঙ্গে বহু প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে প্রেম, অনুগ্রহ ও মর্যাদার সঙ্গে অবস্থান করেছেন এবং আমাকে সচল রেখেছেন। অন্যজন আমার প্রকাশক এবং প্রিয় বন্ধু র‌্যান্ডম হাউস অস্ট্রেলিয়ার নিকি ক্রিস্টার। বিরল প্রতিভাবান এই সম্পাদক প্রায় ২০ বছর ধরে আমার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি এমন একজন প্রকাশক যিনি আমাকে ও অস্ট্রেলিয়ার বহু লেখককে অগণিত পাঠকের কাছে পরিচিত করে তুলেছিলেন। দ্য ন্যারো রোড টু দ্য ডিপ নর্থসহ (তার ষষ্ঠ উপন্যাস, যেটির জন্য তিনি এ বছর ম্যান বুকার পুরস্কার অর্জন করেছেন) নিকির প্রকাশিত বইগুলো আমার জন্য একেকটি অনন্য উপহার। এগুলো আমার জীবনের অফুরন্ত সৃজনশীল আনন্দঘন মুহূর্ত। শেষ পর্যন্ত জীবন উপন্যাসের মতোই আমাদের কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দেয়। খিটমিটে প্রকৃতির লেখকরা কখনও ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারেন না।
আমি সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা লেখকদের মধ্য থেকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছি। গত রাতে আমি হাওয়ার্ড জ্যাকবসনকে বলেছি, এই সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে কোনো একটি গ্রন্থকে নির্বাচিত করা খুব কঠিনই বটে। আমি আশা করব, পাঠকরা এই বিষয়টি মনে রাখবেন যে, ২০১৪ সালের ম্যান বুকার পুরস্কার শুধু আমার একার নয়; বরং সংক্ষিপ্ত তালিকায় যাদের গ্রন্থ ছিল তাদের সবার। আমি এর অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। জশ, হাওয়ার্ড, নীল এবং আলীসহ আজকের এই গৌরবের রাত সবার বলেই আমি মনে করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।
টিএস এলিয়ট পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ
রুথ প্যাডেলের ধর্মীয় উপলব্ধির অনুসন্ধানমূলক গ্রন্থ লার্নিং টু মেক অ্যান অড ইন নাজারেথ এবং কেভিন পাওয়ারের লেটার কম্পোজড ডিউরিং অ্যা লাল ইন দ্য ফাইটিং- যা ইরাক যুদ্ধের পটভূমিতে রচিত- এবারের টিএস এলিয়ট পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে।
রুথ প্যাডেল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের কেভিন পাওয়ার পর্যন্ত সবাই ইরাকের সৈন্যদের জীবনের দিকে একনজর তাকিয়েছেন।
সকালে পোয়েট্রি বুক সোসাইটি প্যাডেলের লার্নিং টু মেক অ্যান অড ইন নাজারেথ গ্রন্থটির নাম ঘোষণা করে। যেখানে শিরোপা জয়ী একজন ব্রিটিশ কবি খ্রিস্টান, ইহুদি ও ইসলাম ধর্মের মধ্যে মিলের ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরেন, যা অন্ধকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।
পুরস্কারের জন্য প্রকাশক কর্তৃক ১১৩টি গ্রন্থ জমা দেয়া হয়েছিল, যার মধ্য থেকে বিচারক হেলেন ডানমোর, সীন বোরোডেল ও ফিওনা স্যাম্পসন দশটি গ্রন্থ বেছে নিয়েছেন সংক্ষিপ্ত তালিকার জন্য। এই তালিকায় সাঙ্গীতিকতা, রহস্যময়তা ও আকাক্সক্ষার রসায়ন গুরুত্ব পেয়েছে বলে কবি ও জুরি বোর্ডের প্রধান ডানমোর উল্লেখ করেছেন।
২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি টিএস এলিয়টের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে পুরস্কারের মূল্য বাড়িয়ে পাঁচ হাজার পাউন্ড থেকে কুড়ি হাজার পাউন্ড করা হবে।
পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ১২ জানুয়ারি। গত বছর এই পুরস্কার পেয়েছিলেন সীনিড মোরিসি তার প্যারালাকস গ্রন্থের জন্য। ১৯৯৩ সাল থেকে প্রদত্ত এই পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ক্যারোল অ্যান ডাফি, সীমাস হিনি এবং ডেরেক ওয়ালকট।
সংক্ষিপ্ত তালিকা
* ব্রাইট ট্রাভেলারস- ফিওনা বেনসন (জোনাথন কেইপ)
* অল ওয়ান ব্রেথ- জন বার্নসাইড (জোনাথন কেইপ)
* ফেইথফুল অ্যান্ড ভার্চুয়াস নাইট- লুইস গ্লুুক (সারকানেট)
* ফায়ার সং- ডেভিড হারসেন্ট (ফেবার)
* দ্য স্টেয়ারওয়েল- মিশেল লংলি (জোনাথন কেইপ)
* লার্নিং টু মেক অ্যান অড ইন নাজারেথ- রুথ প্যাডেল (ক্যাটো অ্যান্ড উইন্ডাজ)
* ফভারি- প্যাসকেল পেটিট (সিরিন)
* লেটার কম্পোজড ডিউরিং অ্যা লাল ইন দ্য ফাইটিং- ক্যাভিন পাওয়ার (স্ক্যাপচার)
* হোয়েন গড ইজ অ্যা ট্রাভেলার-অরুন্ধতী সুব্রমনিয়াম (ব্লাডেকস)

No comments

Powered by Blogger.