ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে চা শ্রমিকরা by আবদুর রহমান সোহেল

রাজনগর উপজেলার চা জনগোষ্ঠীর ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে রয়েছেন। গত ৭ বছরে চা বাগানগুলোতেই বেশি ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। শিক্ষা ও পরিবেশ সচেতনতার অভাবে প্রতিনিয়ত ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি মোকাবিলা করছেন তারা। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলায় ফাঁড়ি বাগানসহ মোট ১৪টি চা বাগান রয়েছে। এসব চা বাগানে মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। দেশে ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপ্রবণ ১৩টি জেলার মধ্যে অন্যতম মৌলভীবাজার জেলা। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের চা জনগোষ্ঠী। ২০০৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফান্ড ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এনজিও সংস্থা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস সেন্টার (বিডিএসসি) ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম শুরু করে। এ সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাহাড়ি চা বাগান অধ্যুষিত ছাড়াও ম্যালেরিয়া ঝুঁকিপ্রবণ রাজনগর সদর, টেংরা, মুন্সিবাজার ও উত্তরভাগ ইউনিয়নে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বছরে একবার এ সংস্থার পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় কার্যক্রম। কিন্তু এ কার্যক্রম কাগজের বাইরে বাস্তবতায় কি পর্যায়ে রয়েছে তা কেউ জানে না। বিডিএসসির হিসাব অনুযায়ী, রাজনগর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ১৪টি চা বাগান এলাকায় ৬৫০ জনের মতো ম্যালেরিয়া রোগীকে চিকৎসা দেয়া হয়েছে। তবে বাগান সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, ম্যালেরিয়া প্রবণতা এখনও ঝুঁকির মধ্যেই আছে। এ কার্যক্রম আরও গতিশীল করা প্রয়োজন। বিডিএসসির তথ্যমতে, ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তাদের পরিচালিত কার্যক্রম থেকে জানা যায়, রক্তকাঁচ পরীক্ষা করা হয়েছে ১১৭৩০ জনের, পজেটিভ ৫৫৯, ফেলসিপেরাম ১৬, ভাইভেক্স ৫৪০, মিক্স ৩, আরডিটি পরীক্ষ ১৩১৩, পজিটিভ ৯৫, মোট পজিটিভ ৬৫৫ জন। ‘১৩ সাল পর্যন্ত এলএলআইএন মশারি বিতরণ ২৪ হাজার, ৬৫ হাজার ৯শ ৬০টি মশারি চুবিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এই এনজিও সংস্থাটির কর্তারা জানিয়েছেন, চা শ্রমিকরা ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সেখানে তাদের কার্যক্রম বেশি। যদিও এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন চা শ্রমিক নেতারা। উত্তরভাগ চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি দিপক কৈরী বলেন, আমাদের বাগানে প্রায় ৮-৯ হাজার মানুষ বাস করে। তবে কতজন ম্যালেরিয়া রোগী আছে আমরা জানি না। তবে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি বেশি আমাদের বাগানেই। বাগানের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। করিমপুর চা বাগানের শ্রমিক কাজল রায় বলেন, আমরা বিডিএসসির দেয়া মশারি পাইছি। ম্যালেরিয়ার কি চিকিৎসা দেয়া হয় আমরা জানি না। আমাদের বাগানের অনেকেই এখনও মশারি পায়নি। বিডিএসসি ম্যানেজার মো. ওমর ফারুক শনিবার (২৫শে অক্টোবর) বলেন, রাজনগর উপজেলার চা বাগান এলাকায়ই ম্যালেরিয়া রোগী বেশি। চা বাগানগুলোতে মশারি এবং মশারি চুবিয়ে দেয়া হচ্ছে। ঝুঁকি থাকার পরও গ্লোবাল ফান্ড থেকে যা পাওয়া যায় তাই বিতরণ করা হয়। উত্তরভাগ, উদনা, সাকেরা, করিমপুর ও চাঁদভাগ বাগানে আমাদের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.