চট্টগ্রামে মসজিদের একাউন্টে ১৯ কোটি টাকা, তদন্তে দুদক by মহিউদ্দীন জুয়েল

লন্ডন থেকে রহস্যজনকভাবে ১৯ কোটি টাকা এসেছে বাংলাদেশে একটি ব্যাংক একাউন্টে। পুলিশ ধারণা করছে, জঙ্গি তৎপরতা শক্তিশালী করার জন্য এ অর্থ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সহ ৪ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে চট্টগ্রাম পুলিশ। অভিযুক্তরা হলেন- মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, মাইজভাণ্ডারি শরীফ শাহী মসজিদের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মাইজভাণ্ডারি, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ মোহাম্মদ সাইদুল আলম ও চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার রাকিব নামের একজন। মঙ্গলবার রাতে তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন ওই থানার ইন্সপেক্টর (অনুসন্ধান) নেজাম উদ্দিন। এতে তিনি বলেন, গত ৩০শে এপ্রিল লালদীঘির শাখা জনতা ব্যাংকে একটি যৌথ একাউন্ট খোলেন শাহজাহান মাইজভাণ্ডারি ও শহিদুল আলম। এরপর ফটিকছড়ি আসন থেকে নির্বাচিত তরীকত ফেডারেশনের এমপি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ১৭ই মে। এর নম্বর ১০৬৬। এতে তিনি দাবি করেন, তার নকল স্বাক্ষর ব্যবহার করে ওই একাউন্ট খোলা হয়েছে। এর সূত্র ধরে পুলিশ অনুসন্ধান করে এবং অভিযোগের সত্যতা পায়। তাতে দেখা যায়, আলমগীর নামে এক পাকিস্তানি নাগরিক ওই অর্থ একটি চেকের মাধ্যমে জমা দিয়েছেন। তিনি এখন বসবাস করেন লন্ডনে। সেখানকার হোয়াইট চ্যাপেল সড়কে অবস্থিত বারক্লেস ব্যাংকের পিএলসি শাখা থেকে ওই অর্থ তিনি এই একাউন্টে জমা করেন। মাইজভাণ্ডার শরিফ শাহী মসজিদের একাউন্টে ১৯ কোটি টাকা রাখার ঘটনায় তোলপাড় চলছে বন্দর নগরীতে। তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা। গতকাল এ সংক্রান্ত মামলার কপি দুদকের কার্যালয়ে জমা হওয়ার পর ঘটনা তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। আগামী রোববার কিংবা সোমবার ঢাকা থেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার কথা রয়েছে। এর আগে ওই মসজিদের একাউন্টে ১৯ কোটি টাকা রাখার ঘটনায় সাধারণ মহলে রহস্যের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে ওসি তদন্ত নেজামউদ্দিন বলেন, ঘটনাটি বেশ রহস্যজনক। এত টাকা কেন এলো তা পরিষ্কার নয়। তবে লন্ডন থেকে এসেছে বলে আমরা জেনেছি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জঙ্গি অর্থায়নের কাজে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা করা হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। তবে সব কিছুই খতিয়ে দেখলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। দুদক বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। টাকাগুলো এসেছে লন্ডনের বারক্লেস ব্যাংক পিএলসি শাখা থেকে। সেখানকার মূল্যে দেড় মিলিয়ন পাউন্ড। গত মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পুলিশ কমিশনার থানায় মামলা করার নির্দেশ দেন। জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মাইজভাণ্ডার শরিফ শাহী মসজিদের নামে ওই গোপন একাউন্টটি খোলা হয়েছিল নগরীর জনতা ব্যাংক, লালদীঘির পাড় শাখায়। পাকিস্তানি  নাগরিক আলমগীরের মাধ্যমে দেড় মিলিয়ন পাউন্ড অর্থাৎ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৯ কোটি টাকা জমা হওয়ার কথা শোনা যায়। এর আগে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি এমপি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি নিজেই এই বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানান। এতে বলা হয়, মসজিদ পরিচালনা ও উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দুল আলম শাহজাহান ও তার ভাই কমিটির কোষাধ্যক্ষ এসএম শহিদুল আলম যুগ্মভাবে জনতা ব্যাংকের লালদিঘি শাখায় ৫০০০ টাকা জমা দিয়ে ওই হিসাবটি খুলেছিলেন। মো. আলমগীর পাকিস্তানি নাগরিক। তিনি লন্ডনে বসবাস করেন। ঢাকায় শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদের মাধ্যমেই চেকটি ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনার সঙ্গে তার জড়িত থাকার তথ্য অস্বীকার করেন। মামলার নথি ঘেঁটে দেখা যায়, অভিযোগে মসজিদ পরিচালনা ও উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দুল আলম শাহজাহান ও তার ভাই কমিটির কোষাধ্যক্ষ এসএম শহিদুল আলমকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি হিসেবে শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও রাকিবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.