সিরিয়ায় শরণার্থী শিবিরে ব্যারেলবোমা

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় আবার ‘ব্যারেলবোমা’ হামলা চালিয়েছে দেশটির সরকারি বাহিনী। বুধবার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইদলিবে পলাতক শরণার্থী শিবির আবেদিন ক্যাম্পে এই হামলা চালানো হয়। ভয়ঙ্কর এ হামলায় অন্তত ৬০ শরণার্থী নিহত হয়েছে। খবর এএফপি, ডেইলি মেইল। আল হাবেত অঞ্চলের আবেদিন শরণার্থী শিবিরে এ বোমা বিস্ফোরিত হওয়ার পর দেখা যায় নিহতের সিংহভাগ নারী ও শিশু, এমনটাই জানাচ্ছে কাতারভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আলজাজিরা। আহতদের ৩০ কিলোমিটার দূরবর্তী এক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আক্রান্ত অঞ্চলের জনৈক শরণার্থী ইউটিউবে এক ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে দেখা যায় আবেদিন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া নারী ও শিশুদের লাশ ইতস্তত ছড়িয়ে আছে, তাঁবুতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এদিকে হামলাকে বর্বর ও বীভৎস আখ্যা দিয়ে বুধবারই এক বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেন সাকি। তিনি বলেন, আবেদিন ক্যাম্পের এ হামলা বর্বরতা ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্যদিকে বেশ কিছুটা সময় বিরতির পর রণভূমি সিরিয়ায় আবারও মানবতাধস ঘটাতে এল বাশার আল আসাদের প্রিয় ব্যারেলবোমা, ব্যাপক বিতর্কের পর যার প্রয়োগ অনেকদিন বন্ধ থাকার ফলে সিরিয়ার মানুষ ভুলেই গিয়েছিল প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ব্যারেলবোমা প্রীতির কথা। যুদ্ধকালীন সহিংসতার শিকার সাধারণ মানুষের এক ভয়ার্ত শরণার্থী শিবিরে সরকারি দুটি হেলিকপ্টার থেকে ব্যারেলবোমা নিক্ষেপ করা হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই অন্তত ৬০ জন নিহত হন এবং অসংখ্য মানুষ হন আহত। ব্যারেলবোমা ফেলার কারণ হিসেবে বাশার বরাবরই বলে আসছেন, তার শাসনতন্ত্রবিরোধী সন্ত্রাসবাদী শক্তির উপস্থিতি চিহ্নিত করা মাত্রই সেখানে তিনি ব্যারেলবোমা নিক্ষেপের নির্দেশ দেন। ব্যারেলবোমায় লুকানো অসংখ্য বোমা থেকে অবিরত বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। যে কারণে লক্ষ্যবস্তুর নিকটবর্তী কেউই নিস্তার পায় না। একারণেই ব্যারেলবোমাই বাশারের পছন্দ বলে এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে ছোড়ার কথা বলা হলেও ইতিপূর্বে যতবার এ বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে, দেখা গেছে প্রতিবারই তার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে জনসমাগমের স্থান বাজার, আবাসিক এলাকা কিংবা শিশুদের বিদ্যালয়ে এবং সিরিয়ায় ‘সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রবিরোধী’ কর্মকাণ্ড না কমে যে বরং বেড়ে গেছে তার প্রমাণ দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।
কোবানির অর্ধেক এখনও আইএসের
কোবানির অর্ধেকেরও বেশি এলাকা এখনও ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বুধবার ফ্রি সিরিয়ান আর্মি বিদ্রোহী যুদ্ধাদের একটি গ্র“পের একজন প্রবীণ নেতা টেলিগ্রাফকে এ তথ্য জানান। ফ্রি সিরিয়ান আর্মি বিদ্রোহী যোদ্ধারা কুর্দি পেশমার্গা যোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে অবরুদ্ধ শহর কোবানির দখল নিতে যুদ্ধ করছে। ইরাকের কুর্দি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হতে ১৫০ পেশমার্গা যুদ্ধাকে পাঠানো হয়েছে শহরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য। বুধবার রাতে ভারি সাঁজোয়া যানসহ ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং কামান নিয়ে তারা তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত দিয়ে কোবানিতে পৌঁছান। এর আগে দিনের শুরুতে, সদ্য মিত্র স্থাপন করা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের একটি ব্যাটালিয়ন কুর্দি মিলিশিয়াদের সঙ্গে যোগ দিতে তুরস্ক সীমান্ত দিয়ে কোবানিতে যাওয়ার অনুমতি পায়। ৩০ সেনা নিহত ইসলামিক স্টেট (আইএস)
যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ সিরিয়ান সেনা নিহত হয়েছেন। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বুধবার এ কথা জানিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, কেন্দ্রীয় হমস প্রদেশের একটি গ্যাসফিল্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। গত জুলাই মাসে আইএস যোদ্ধারা শা’র নামক গ্যাসফিল্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এর কয়েকদিন পর সেনাবাহিনী আবার সেটির পুনর্দখল নেয়। সে সময় ওই গ্যাসফিল্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে সংঘর্ষ হয় তাতে উভয়পক্ষের প্রায় সাড়ে তিনশ’ লোক নিহত হন। সংস্থাটির মতে, সিরিয়ার ভয়াবহ সংঘর্ষগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। মঙ্গলবার রাতভর উভয়পক্ষের মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয়। এতে ইসলামিক স্টেট যোদ্ধারা সরকারি ও সরকার-সমর্থিত অন্তত ৩০ যোদ্ধাকে হত্যা করে বলে জানায় সংস্থাটি।

No comments

Powered by Blogger.