‘হ্যাঁ, আমরা বলেছিলাম’ -প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্যই ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন হয়েছিল এবং সে নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নেয়ার জন্য সব চেষ্টাই করা হয়েছে। নির্বাচনে না গিয়ে তারা নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্ট কথা না বললেও তিনি জানিয়েছেন, একটি নির্বাচন হয়েছে, পরবর্তীকালে আরও একটি নির্বাচন হবে- এটাই স্বাভাবিক। সময়মতো নির্বাচন হবে। গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থায় যে কোন সময় নির্বাচন দেয়ার অধিকার সরকারের থাকে। অনেকে হয়তো আগাম দেন, অনেকে সময় পূর্ণ করে দেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন। সাম্প্রতিক সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও পরবর্তী নির্বাচন, জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায় এবং ভারতের মিডিয়ায় প্রকাশিত জঙ্গি তৎপরতার প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন তিনি।

৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকার প্রধান হিসেবে আপনি বলেছিলেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নির্বাচন হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য ও পরবর্তী নির্বাচন প্রসঙ্গে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমরা বলেছিলাম, বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আমরা সব উদ্যোগই নিয়েছি। আমি নিজে টেলিফোনে কথা বলেছি। এ অবস্থায় নির্বাচন ছাড়া বিকল্প কিছু ছিল না। শেখ হাসিনা বলেন, ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন না হলে কি হতো! ১/১১-এর ধাক্কা তো এর আগে সামলাতে হয়েছে। সে কথা আপনাদের সবার মনে আছে। একটি নির্বাচনের পর আরেকটি নির্বাচন হবে- এটি তো সাধারণ কথা। জনগণ সরকারকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত করে। আর পাঁচ বছর ক্ষমতা পূর্ণ করে আরেকটি সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা একমাত্র আওয়ামী লীগই হস্তান্তর করেছে। এছাড়া কোন সরকার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারে নাই।
আমিরাত সফর সফল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা সমস্যা সমাধানে দেশটির পক্ষ থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে। আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে টার্গেট করে ভারতে জঙ্গিরা কাজ করছে দেশটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা এক সময় ছিল। আমরা তাদের তৎপরতা বন্ধ করেছি। তারা এখন আশ্রয় নিয়েছে ভারতে। তবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা রোধে একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে ভারতের সমঝোতা আছে। যা করার করে যাচ্ছি। জঙ্গিদের দমনে বাংলাদেশ, ভারত এবং এই অঞ্চলের অন্য দেশ একমত আছে। তিনি বলেন, ভারতের পত্রপত্রিকায় যা এসেছে আমরা তা যাচাই করছি। কোন হুমকিতে ভীত নন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আছি তো এক্সটেনশনে। আমি কোন দিন উদ্বেগ বোধ করিনি। জন্মিলে একদিন মরতে হবে। এ দেশের মানুষের জন্য আমার যে টুকু করার আমি তা করে যাবো। সে পর্যন্ত বেঁচে থাকবো। আমাকে হত্যার তো বহু চেষ্টা হয়েছে। কেউ মারতে পারেনি।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জানা উচিত, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী এ বিচার চলছে। এ আইনটি আন্তর্জাতিক মানসম্মত। আন্তর্জাতিক আইন মেনেই এ আইন করা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক পরে এখনও তাদের দেশে বিচার হচ্ছে। তাদের বেলায় বিচার হবে, আমার দেশের মানুষ কি মানুষ না?
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ উদ্বেগ কোথায় ছিল- যখন ফিলিস্তিনে শ’ শ’ নারী-শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করা হলো? গর্ভবতী নারীকে হত্যা করা হলো? তখন তো ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোন উদ্বেগ শুনিনি। এটাতে কি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী তাদের বেলায়ই শুধু উদ্বেগ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দেশের আইন অনুযায়ী এ বিচার চলবে। অপরাধীরা শাস্তির আওতায় আসবে।
আরব আমিরাত সফর ব্যর্থ হয়েছে- বিএনপির এমন দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ব্যর্থ দেখে তারা নিজেরাই আসলে ব্যর্থ। নির্বাচনে আসেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা, নির্বাচন বানচাল করার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বানচাল করতে পারেনি। যারা প্রতি পদে পদে ব্যর্থ তারা সারাক্ষণ শুধু ব্যর্থতাই দেখবে। তারা তাদের দেখা দেখুক, আমি আমার মতো দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাবো।
যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে, আগামী দিনে যদি কোন সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা বর্তমান সংবিধানের আইনুযায়ী প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমার ফলে খালাস পাবে- এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন আছে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা করা যাবে না। কারণ আমরা একটি রাষ্ট্র চালাই, প্রেসিডেন্টের কাছে দেশের জনগণের একটি অধিকার থাকে। নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষার জন্যই প্রেসিডেন্টকে কিছু ক্ষমতা দেয়া থাকে।
বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো হবে জানিয়ে প্রধাণমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষকে যেন ঘর-বাড়ি বিক্রি করে এখন আর বিদেশে যেতে হয় না সে জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি। আমি আহ্বান জানাবো, অনেকেই অনেক রকম প্রলোভন দেখাবে। খোঁজখবর না নিয়ে কেউ যেন বিদেশে না যায়। আর আমিরাতে নারী শ্রমিক পাঠাতে সব সহযোগিতা সরকার করবে। কাউকে কিছু করতে হবে না। তাদের কোন খরচও হবে না।
আরব দেশগুলো বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে আসছে বলে এক ধরনের প্রচারণা রয়েছে, আমিরাত সফরে এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। কেউ কোন প্রশ্নও করেনি। এটি আলোচনায়ও আসেনি।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের অপরাধ প্রবণতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি সত্য বাংলাদেশের অনেকে সেখানে অনেক অপরাধে জড়াচ্ছে। এটাও মনে রাখতে হবে এক সময় মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের লোকদের সুনাম ছিল। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর অনেকে অপকর্ম করে দেশ থেকে চলে গিয়েছিল। তাদের কাউকে কাউকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। এরাই অপরাধে জড়ায়।
গত ২৫ থেকে ২৭শে অক্টোবর আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের প্রশাসকের আমন্ত্রণে আমিরাত সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। তার তিন দিনের এ সফরকে ‘অত্যন্ত সফল’ বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, তার আরব আমিরাত সফরের ফলে সে দেশে বাংলাদেশীদের জন্য শ্রমবাজার নতুন করে উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আরব আমিরাতের উপ-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসকের সঙ্গে অত্যন্ত হৃদ্যতা ও আন্তরিক পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ এবং টেকনাফ থেকে মিরসরাই পর্যন্ত ড্রাইভওয়ে নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.