ভাবীর সঙ্গে পরকীয়া, অতঃপর আত্মহত্যার চেষ্টা

তারা এখন মৃত্যুপথযাত্রী। হাসপাতালের পাশাপাশি কক্ষে এখন তাদের অবস্থান। দগ্ধ শরীর নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে রিনা বেগম ও আবদুর রহিম। একসময় তাদের মধ্যে ছিল পরকীয়া সম্পর্ক। আর এখন চলছে একে অপরের ওপর দোষারোপ। এ সম্পর্কের টানাপড়েনের জের ধরেই একজনের দেয়া আগুনে দগ্ধ হয়েছে দু’জনই। শরীরের অর্ধেকের বেশি অংশই তাদের পুড়ে গেছে। রহিম-রিনা সম্পর্কে দেবর-ভাবী। বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার বেলকপাড়া গ্রামে। গত মঙ্গলবার ভাবী রিনা বেগমের গায়ে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় রহিম। প্রতিবেশীরা জানান, বেলকপুর গ্রামের আক্কাছ আলীর ছেলে আনিসুর রহমান আনিস প্রায় ১৭-১৮ বছর ধরে সৌদি আরব থাকেন। মাঝে মাঝে তিনি ছুটিতে বাড়ি আসেন। দু’মাস পর আবারও সৌদি পাড়ি জমানোর কথা রয়েছে তার। প্রবাসে থাকার সুযোগে আনিসের আপন চাচাতো ভাই রহিম তার স্ত্রী রিনা বেগমের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে। রহিমের পিতার নাম ইকরাম আলী। তাদের পরকীয়ার বিষয়টি এলাকায় ওপেন সিক্রেট ছিল। এ নিয়ে দু’পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বও চলছিল। এ কারণে আনিস বিদেশ চলে যাওয়ার সময় প্রতিবারই স্ত্রী রিনাকে তার বোনের বাড়িতে রেখে যেতেন। দেশে ফিরে তাকে বাড়িতে আনতেন। কিন্তু এর মধ্যেও থেমে থাকেনি রহিম ও রিনার পরকীয়া। রহিম এ কারণে তার স্ত্রীকেও পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। সমপ্রতি আবারও আনিস ছুটিতে বাড়ি এলে উভয়ের এ সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। রিনা আর ওই সম্পর্ক রাখতে চায় না বলে রহিমকে জানিয়ে দেয়। কিন্তু নাছোড়বান্দা রহিম কিছুতেই এ প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি হয়নি। রিনাও তাকে এড়িয়ে চলতে থাকে। এতে ক্ষিপ্ত হয় রহিম। ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রিনাকে বাড়ির পাশে ডেকে নেয় রহিম। এ সময় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে রিনার গায়ে পেট্রল ঢেলে দেয়। নিজের গায়েও পেট্রল ঢালে। প্রথম দিকে রিনা বুঝতে না পারলেও একটু পরেই পেট্রলের গন্ধ টের পেয়ে দৌড় দেয়। এ সময় পেছন থেকে ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন জ্বেলে রিনার দিকে ছুড়ে মারে। শরীরের আগুন ধরে গেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রিনা। এ সময় স্থানীয়রা তার শরীরের আগুন নিভিয়ে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। একই সময় রহিমও নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দৌড়াতে থাকে। এ সময় স্থানীয় দু’জন মহিলা তাকে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দেন। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করে তাকেও এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। উভয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ওই দিন দুপুরেই তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তাদের বার্ন ইউনিটে দোতলায় পাশাপাশি মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। ডা. পার্থশঙ্কর পালের অধীনে তারা চিকিৎসাধীন। সেখানেই গত তিন দিন ধরে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে তারা। রিনার খাদ্যনালীতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে সে খাবার খেতে পারছে না। তার শরীরের ৫৮ ভাগ পুড়ে গেছে। অপরদিকে রহিমের পুড়েছে শরীরের ৪৮ ভাগ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের উভয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রতিবেশীরা আরও জানিয়েছেন, আনিস-রিনা দম্পতির ১২ বছরের একটি ছেলে ও ৯ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। অপরদিকে রহিম ৫ বছর আগে বিয়ে করে। বিএ পড়ুয়া স্ত্রী স্বামীর কাছে আসতে চাইলেও পরকীয়ার কারণে তাকে নিজের কাছে রাখে না রহিম। এর আগে ৫ বছর আফ্রিকাতে ছিল সে। এদিকে এ ঘটনায় রহিমকে দায়ী করছেন রিনার পরিবার ও তার পিতা তারা মিয়া। তিনি বলেন, রহিম প্রায়ই তার মেয়েকে বিয়ে প্রস্তাব দিতো। এতে সে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তার শরীরে আগুন ধরিয়েছে। এ সময় ওই আগুন অসাবধানতায় তার শরীরে লেগেছে। এ ব্যাপারে তিনি বাদী হয়ে ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। রহিমকে প্রধান আসামি করে উস্কানিদাতা হিসেবে তার মা ও ভাই ফজলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। রহিম বর্তমান পুলিশ প্রহরায় রয়েছে। অপরদিকে এ ঘটনার জন্য রিনাকে দায়ী করেছে রহিমের পরিবার।

No comments

Powered by Blogger.