রাস উৎসব লোনা পানিতে প্রার্থনা by আবু সাঈদ শুনু

আগামী ৫ই নভেম্বর সাগরপাড়ের দুবলার চর মহোৎসবে মেতে উঠবে। শুরু হবে রাস উৎসব। এর মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন আয়োজকরা। তেমনি সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে প্রস্তুত। একই সঙ্গে প্রস্তুতি নিয়েছে চোরা হরিণ শিকারিরা। এ উৎসবে প্রতি বছর গোপনে হরিণ নিধন করা হয়। কাজেই স্থানীয় প্রশাসন হরিণ শিকার রোধ ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। সুন্দরবনজুড়ে বন বিভাগ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে মেলা চলাকালে ওই এলাকায় জারি করা হবে রেড অ্যালার্ট। বন বিভাগ ও উৎসব আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন জানান, শত বছর ধরে বঙ্গোপসাগর কূলে সুন্দরবনের দুবলার চরে আলোর কোলে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাংলা কার্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকের ভরা পূর্ণিমার তিথিতে এ রাস উৎসব উদযাপিত হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ সময় পূর্ণিমার জোয়ারের লোনাপানিতে স্নান করে তাদের পাপমোচন হবে- এমন বিশ্বাস নিয়ে উৎসবে যোগ দিলেও, কালের বিবর্তনে এখন তা নানা ধর্ম-বর্ণের লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আবালবৃদ্ধবনিতা নির্বিচারে সবার পদচারণায় মুখর হয়ে এ মেলা পরিণত হয় এক মিলনমেলায়। দুবলার চরের মেলায় লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকাযোগে তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীরা এসে সমবেত হয় দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। সেই সঙ্গে আসেন অসংখ্য বিদেশী পর্যটকও। উৎসবের সময় কুটির শিল্পের বিভিন্ন মালের পসরা সাজিয়ে বসে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী। এ ছাড়া, নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আযোজন করা হয়। বেসরকারি একাধিক ট্যুরিস্ট কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, রাস উৎসবে যোগ দিতে ইতিমধ্যে অনেক ট্যুরিস্ট লঞ্চ ও বোট বুকিং নিতে প্রস্তুতি শুরু করেছেন। অনেকে আবার সুবিধামতো বুকিং না পেলে হতাশ হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। মেলা উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন জানান, আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে এবার বেশ জমজমাটভাবে মেলা উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মংলাসহ সুন্দরবনের ৮টি পয়েন্ট দিয়ে রাস মেলায় প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এসব পয়েন্ট দিয়ে অসংখ্য নৌকা ও ট্রলারে করে হাজার হাজার দর্শনার্থী আলোর কোলের উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রবেশ করবে। মেলায় প্রবেশকারীদের নির্দিষ্ট ফি দিয়ে বন বিভাগের কাছ থেকে অনুমতিপত্র নিতে হবে। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, রাস মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন ও এর নিরাপত্তায় বন বিভাগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তাসহ হরিণ শিকার রোধে বনরক্ষীদের পাশাপাশি মেলায় এবারও র‌্যাব, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল থাকবে। এ ছাড়া, মেলায় চোরা শিকারিদের রুখতে সব ধরনের দর্শনার্থীর অগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া, পূণ্য স্নানের সময় কোন পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চোরা শিকারিরা কৌশলে বন্দুক দিয়ে হরিণ শিকারের পরিকল্পনা করে থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছেও এ ধরনের তথ্য রয়েছে। এ কারণে এবারও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। তাদের মতে, মংলা, রামপাল ও দাকোপ এলাকার অনেকেই এ উৎসবে অংশ নেয়ার নামে হরিণ শিকারের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এ ব্যাপারে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও আমীর হোসেন চৌধুরী জানান, রাস মেলায় কোনভাবেই যেন হরিণ শিকার ও বনজ সম্পদের ক্ষতি না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় সব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.