চালের ঘাটতি, তবুও রপ্তানি পাঁচ বছরে আমদানি ১৮ লাখ টন

গত অর্থবছর ছাড়া অন্য সব অর্থবছরেই সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি করা হয়েছে। ২০০৯- ২০১০ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর অর্থাৎ চার অর্থ বছরে খাদ্য অধিদপ্তর ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪৯ টন চাল আমদানি করেছে। নিজেদের ঘাটতি থাকলেও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি পেতে শ্রীলঙ্কায় লোকদেখানো চাল রপ্তানি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ অর্থবছরে প্রায় ১৮ লাখ টন চাল আমদানি করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ৫১ হাজার ৫২৩ টন, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৬ লাখ ৩১১৭ টন ও জি টু জি’র মাধ্যমে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৮৮৪ টন, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩০৮ টন ও জি টু জি’র মাধ্যমে ২ লাখ ৮০ হাজার ৭৫৬ টন এবং ২০১২- ২০১৩ অর্থবছরে ২০৫৮ টন চাল আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া, গমও আমদানি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এর মধ্যে ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ১৫২ টন, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ৮ লাখ ২০ হাজার ১২৭ টন, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৪২৮ টন ও জি টু জি’র মাধ্যমে এক লাখ ১৫ হাজার ৬৬৯ টন, ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ২০ হাজার ৫২২ টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৬ লাখ ৫২ হাজার ২৭ টন ও জি টু জি ভিত্তিতে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৯৭৩ টন এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ৬৯ হাজার ২১৩ টন গম আমদানি করা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ ১৩ লাখ ৯১ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ১১ লাখ ৪৩ হাজার টন এবং গম দুই লাখ ৪৮ হাজার টন। এছাড়া, বন্দরে ভাসমান অবস্থায় ৩৩ হাজার টন গম রয়েছে। এত চাল ও গম আমদানির পরও রপ্তানি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আগামীতে দেশে খাদ্যশস্যের সমস্যা দেখা দিলে তোপের মুখে পড়তে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে। কারণ আমদানিকৃত দেশ রপ্তানিনির্ভর দেশ হিসেবে পরিচিতি পেতে যাচ্ছি। এদিকে জি টু জি ভিত্তিতে ৫০ হাজার টন মোটা চাল রপ্তানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতি আগ্রহের কারণেই চাল রপ্তানি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশস্থ শ্রীলঙ্কান হাই কমিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রস্তাব পাওয়ার পর চাল রপ্তানির বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মতামতের জন্য পাঠানো হয়। খাদ্য অধিদপ্তর তাদের মতামতে জানায়, বর্তমানে সরকারি ভাণ্ডারে প্রায় ১১ লাখ টন চালের মজুত রয়েছে। গত বছরের এ সময়ের চেয়ে এ মজুত প্রায় আড়াই লাখ টন বেশি। দেশের বর্তমান চালের উৎপাদন এবং সরকারি গুদামে মজুত পর্যালোচনায় ৫০ হাজার টন থেকে এক লাখ টন চাল সরকারি পর্যায়ে রপ্তানি করা যেতে পারে। খাদ্য অধিদপ্তরের এ মতামত পাওয়ার পর বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন থেকে জাহাজ ভাড়া সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন সংগ্রহ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এরপর চালের অর্থনৈতিক মূল্য, জাহাজীকরণ, ইন্স্যুরেন্স, পরিবহন ব্যয় ইত্যাদি বিবেচনা করে রপ্তানির জন্য চালের সম্ভাব্য দাম ৪৯৩ ডলার নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে প্রতি টন চালের গুদাম মূল্য ৪৫৫ ডলার, জাহাজ ভাড়া ৩০ ডলার, ইন্স্যুরেন্স খরচ ২ ডলার এবং গুদাম থেকে বন্দর পর্যন্ত পরিবহন খরচ ৬ ডলার প্রাক্কলন করা হয়। মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে বলা হয়, বাংলাদেশ এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে মোটা চাল রপ্তানি করেনি। বর্তমানে দেশে মজুত বিবেচনায় ৫০ হাজার টন সিদ্ধ মোটা চাল রপ্তানি করলে বাংলাদেশ চাল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ পাবে। পাশাপাশি মোটা চাল রপ্তানি করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাণিজ্য সমপ্রসারণের দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এরপরই প্রস্তাবটির অনুমোদন মিলেছে।

No comments

Powered by Blogger.