সাগরের গ্যাস ব্লক ছেড়ে দিয়েছে মার্কিন কোম্পানি কনোকোফিলিপস

মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি কনোকোফিলিপস বঙ্গোপসাগরের ১০ ও ১১ নং গ্যাস ব্লক দু’টি ছেড়ে দিয়েছে। গত রোববার এ বিষয়ে পেট্রোবাংলাকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছেন তারা। জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কনোকোফিলিপস বলছে ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে ৪ টিসিএফ গ্যাস আছে। কিন্তু এই গ্যাস উত্তোলন করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন না। আগের পিএসসিতে গ্যাসের দাম কম হওয়ায় তারা দীর্ঘদিন ধরে দাম বাড়ানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। সরকার এতে রাজি না হওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে ব্লক ছেড়ে দেয়ার কথা জানানো হয়। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) সই হওয়ার তিন বছর পর চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে কনোকোফিলিপস গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য চাপ দিতে শুরু করে। ওই সময় তারা পেট্রোবাংলার কাছে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের প্রতিবেদন জমা দেয়। পুরনো পিএসসিতে সমুদ্রে গ্যাসের দাম বাড়ালে স্থলভাগে কাজ করা অন্য গ্যাস কোম্পানিগুলোরও দাম বাড়ানোর দাবি আরও জোরালো হবে। এতে দেশের গ্যাসের দাম অনেকটা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। এমন ধারণা থেকেই সরকার কনোকোর প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এছাড়া, পিএসসি সংশোধন করে গ্যাসের দাম বাড়ালে আইনগত জটিলতায় পড়ারও আশঙ্কা ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৬ই জুন সাগরের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য কনোকোফিলিপসের সঙ্গে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) করে পেট্রোবাংলা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে এ দু’টি ব্লকে সমুদ্রের গভীরতা এক থেকে দেড় কিলোমিটার। পেট্রোবাংলায় জমা দেয়া প্রতিবেদনে মার্কিন কোম্পানিটি ব্লকের একটি অংশে তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছে। সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে তারা। এর ৮০ শতাংশই নেতিবাচক বিবেচনা করা হচ্ছে এ বিনিয়োগকে। পিএসসি ২০০৮ অনুযায়ী প্রতি হাজার ঘনফুট (এক ইউনিট) গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয় ৪ দশমিক ২ ডলার। পরে গভীর সমুদ্রে ইউনিটপ্রতি ৬.৫ ডলার দাম নির্ধারণ করে পিএসসি ২০১২ নির্ধারণ করা হয়। কনোকো ওই দাম চেয়ে আসছিল। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় মাত্রার ভূকম্পন জরিপে (টু-ডি সাইসমিক সার্ভে) কতটুকু এলাকায় গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ওই বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। দ্বিতীয় মাত্রার জরিপের পর কূপ খনন না করা পর্যন্ত গ্যাস থাকা সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। এ ধরনের  কোন প্রযুক্তিও আবিষ্কৃত হয়নি। স্থলভাগেই দ্বিতীয় মাত্রার জরিপ করার পর গ্যাস পাওয়ার ঘোষণা দিয়ে পরে দেখা গেছে, সেখানে প্রকৃতপক্ষে কিছুই নেই। এদিকে বঙ্গোপসাগরের দু’টি ব্লকের ৫১৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করার কথা কোম্পানিটির। গভীর সমুদ্রের জন্য ৯ বছর মেয়াদি এ চুক্তিতে তিন ধাপে জরিপ ও খনন কাজ চালানোর কথা রয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানকাল পাঁচ বছর। প্রথম বর্ধিত অনুসন্ধানকাল দুই বছর। দ্বিতীয় বর্ধিত অনুসন্ধানকাল দুই বছর। উন্নয়নকাল সর্বোচ্চ তিন বছর নির্ধারণ করা ছিল। প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে করণীয় হলো এই সময়ে কন্ট্রাক্টরকে ম্যান্ডেটরি ওয়ার্ক প্রোগ্রাম এবং বিডেড ওয়ার্ক প্রোগ্রাম শেষ করতে হবে। এর মধ্যে আছে ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ, ভূ-পদার্থিক জরিপ, অন্যান্য জরিপ (গ্র্যাভিটি, ম্যাগনেটিক, জিওকেমিক্যাল সার্ভে ইত্যাদি)। এরপর তাদের দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করার কথা। তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ শেষ করায় ব্যাংক গ্যারান্টি ফেরত পাবে। দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু করলে তাদের একটি কূপ খনন করতে হতো। এ কূপ খনন করলেই গভীর সমুদ্রের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে গ্যাস রয়েছে কিনা জানা যেতো। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের ২৬টি গ্যাসক্ষেত্রের প্রাথমিক ও সম্ভাব্য মিলিয়ে উত্তোলনযোগ্য মজুতের পরিমাণ ২৭ দশমিক শূন্য ৪ টিসিএফ। এর মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৩ টিসিএফ গ্যাস।

No comments

Powered by Blogger.