মায়ের জন্য ওষুধ নিয়ে ফেরা হলো না মেহেদির

হঠাৎ মায়ের বুকে ব্যথা উঠেছিল। ছেলে মেহেদী হাসান রনি (২২) ছুটে গিয়েছিলেন ওষুধ আনতে। সঙ্গে ডাক্তার দেখানোর জন্য সিরিয়ালে নামও লিখিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু মায়ের জন্য ওষুধ নিয়ে আর ঘরে ফেরা হলো না তার। বাসায় ফেরার পথে ঘাতক ট্রাক তাকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। বুধবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ফ্লাইওভারের কাছে মর্মান্তিক ওই ঘটনা ঘটে। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে গতকাল ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে লাশ দাফনও করা হয়েছে। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, খিলগাঁও থানাধীন বনশ্রীর ৪/২ নম্বর সড়কের ২৬ নম্বর বাসায় মা ও ভাইবোনের সঙ্গে থাকতো মেহেদি। পিতা মোস্তফা কামাল বছর দুই আগে মারা গেছেন। বুধবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ মা নুরজাহানের বুকে ব্যথা করছিল। বাবা নেই, মার যেন হুট করে কিছু না হয়ে যায়- এজন্য মোটরবাইক নিয়ে ওষুধ আনতে যায় মেহেদী। সঙ্গে মাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য সায়েদাবাদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করে সিরিয়াল নম্বর নিয়ে আসে। কিন্তু ওষুধ আর সিরিয়াল নিয়ে বাসায় ফেরা হয়নি। খিলগাঁও ফ্লাইওভারের একটু দক্ষিণে একটি ট্রাক চাপা দেয় তাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল মর্গে পাঠায়। আর মেহেদীর পকেট থেকে উদ্ধার করা মোবাইলের নম্বর থেকে বিষয়টি জানানো হয় তার পরিবারকে। নিহত মেহেদীর মামা ওয়ালীউল্লাহ জানান পরিবারের বড় ছেলে মেহেদিকে মাস ছয়েক আগে চার লাখ টাকা খরচ করে স্টুডেন্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় পাঠান মা নুরজাহান বেগম। কিন্তু মা আর পরিবার ছেড়ে মালয়েশিয়ায় তার ভালো লাগতো না। মাকে ফোন করে বারবার দেশে ফিরে আসতে চাইতো। মা ফিরে আসতে বললে মাস দুয়েক আগে সে চলে আসে ঢাকায়। ঢাকায় ফিরে এসে একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছিল সে। সবুজবাগ থানার এসআই আশরাফুল আলম জানান, নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পুলিশ ঘাতক ট্রাকটিকে শনাক্তের চেষ্টা করছে।

No comments

Powered by Blogger.