দুর্ভোগের অবরোধ চলবেই!

দুর্ভোগের অবরোধ চলবে। 'প্রহসনের' নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ডাকা টানা হরতাল শেষ হলেও অবিরাম অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। সর্বশেষ ৬০ ঘণ্টার হরতাল ও অবরোধ শেষে গতকাল বুধবার বিকেলে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে জনজীবনে দুর্ভোগ আরও প্রলম্বিত হলো। দশম সংসদ নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথের এ অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে জোটের হাইকমান্ড। অবরোধে রাজধানীর জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক হলেও সারাদেশের চিত্র ছিল ভিন্ন। মহাসড়কে ঝুঁকি নিয়ে সীমিত পরিসরে কিছু গাড়ি চলাচল করলেও ভয়ে চলাচল করছেন না সাধারণ যাত্রীরা।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল 'খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে' চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে লাগাতার রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। ৫ জানুয়ারির ভোট ঠেকাতে ১ জানুয়ারি থেকে এ লাগাতার
অবরোধ শুরু করে বিএনপি। ভোটের পর নির্বাচন বাতিলের দাবিতে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক। ভোটের আগের দিন ও ভোটের দিন হরতাল করার পর ৫ জানুয়ারি ভোট শেষে ১৮ দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ কর্মসূচি বুধবার সকাল পর্যন্ত চলবে। পরে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-নির্যাতনের প্রতিবাদে হরতালের সময় বাড়ানো হয় বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত।
অবরোধের পাশাপাশি হরতালে হতাহতদের স্মরণে শুক্রবার সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে। পরদিন শনিবার হবে মহানগর-জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ। একতরফা নির্বাচন বাতিল ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি মঙ্গলবার ঘোষণা করেছিলেন দলের ভাইস চেয়ারপারসন সেলিমা রহমান। কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বোমাবাজিতে উস্কানির মামলায় বুধবার তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
অনির্দিষ্টকাল ধরে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে জনজীবনে দুর্ভোগ আরও দীর্ঘস্থায়ী হলো। শুরু থেকেই ১৮ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধে নেতাকর্মীরা মাঠে নেই। এর বদলে আন্দোলনের চরিত্র শুধুই সহিংসতা। চোরাগোপ্তা বোমা হামলা একের পর এক নিরীহ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অবরোধের পেট্রোল বোমায় জীবন্ত দ্বগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধ শতাধিক নিরীহ মানুষ। অবরোধের কারণে এরই মধ্যে অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। হামলা করে পণ্যবাহী ট্রাক এমনকি অবলা প্রাণী গরুও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বিশিষ্ট নাগরিকসহ আন্তর্জাতিক মহলও সহিংসতার পথ ছেড়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের রাজপথে থেকে নিয়মতান্ত্রিক-গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার আহ্বান জানিয়েছেন বার বার; কিন্তু সে কথা আমলেই না নিয়ে সহিংস কর্মসূচি ঘোষণা করে জনদুর্ভোগকেই প্রলম্বিত করছে বিরোধী জোট।

No comments

Powered by Blogger.