থাই এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনবে দুর্নীতি দমন কমিশন

সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়ায় থাইল্যান্ডে ৩শ’রও বেশি রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে সেদেশের ন্যাশনাল এন্টি করাপশন কমিশন (এনএসিসি) বা জাতীয় দুর্নীতি দমন কমিশন। ৩৮১ আসনবিশিষ্ট থাই পার্লামেন্টের ৩০৮ জন সদস্যকে অভিযুক্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সংবিধান সংশোধন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টার উদ্যোগ নেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিল কমিশন।
এসব রাজনীতিবিদদের অধিকাংশই দেশটির ক্ষমতাসীন দলের বলে জানিয়েছে বিবিসি। নভেম্বরে এক রুলে আদালত জানায়, পুরোপুরি নির্বাচনের ভিত্তিতে সিনেট গঠনের সরকারি উদ্যোগ অসাংবিধানিক। এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ২০০৭ সালে নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন করে সেনাবাহিনী। ওই সংবিধানে সিনেটের আংশিক সদস্যকে মনোনয়নের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়ার বিধান করা হয়। সেনা সরকারের ওই পরিবর্তনটুকু সংশোধন করে আবার পুরানো ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিল থাকসিনের বোন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা সরকার। কিন্তু সংবিধানের সংশোধনের এই সরকারি উদ্যোগে বাধ সাধে দেশটির সাংবিধানিক আদালত। সরকারি ওই উদ্যোগের বিরুদ্ধে আদালত রুল জারি করে। এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগ দায়েরের ফলে এ বিষয়ে একটি তদন্ত শুরু করা হবে। এর সম্ভাব্য ফল হতে পারে, পার্লামেন্টের নিুকক্ষের নির্বাচিত ৩০৮ জন সদস্যকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা। তবে প্রধানমন্ত্রী ইংলাকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হবে না বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বিরোধী দলের প্রতিবাদের মুখে আগামী ২ ফেব্র“য়ারি সরকার যখন একটি সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তখনই এ ধরনের একটি উদ্যোগ নিল দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন। থাইল্যান্ডের নিুবিত্ত শ্রেণীর মানুষরাই প্রধানত ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক, এদের নেত্রী ইংলাককে ক্ষমতা থেকে সরাতে আন্দোলন করে যাচ্ছে বিরোধী দল, যারা প্রধানত দেশটির উচ্চবিত্ত ও প্রতিষ্ঠিত শ্রেণীর প্রতিনিধি। অতীতে থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির ক্ষেত্রে আদালতের রুলিং বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত ও নির্বাসিত থাকসিনের রাজনৈতিক মিত্র সরকারের বিরুদ্ধে রুল জারি করে আদালত।
আদালতের আদেশে, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলকে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয় এবং তাতে তৎকালীন সরকারের পতন হয়। এতে বিরোধী দল সরকার গঠন করার সুযোগ পায়। এখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইংলাকের পদত্যাগ চেয়ে অনির্বাচিত ‘পিপলস কাউন্সিলের’ কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার জন্য আন্দোলন করছে বিরোধী দল। অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন হলে সরকারি দলের কাছে তারা পরাজিত হবেন বলেই মনে করেন থাই রাজনীতির অধিকাংশ পর্যবেক্ষক। ১৪ হাজার ৮শ’ পুলিশ মোতায়েন করা হবে : আগামী সপ্তাহে থাই বিক্ষোভকারীদের ‘ব্যাংকক অচল’ কর্মসূচি রুখতে রাজধানী ব্যাংককে প্রায় ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে। জাতীয় পুলিশের মুখপাত্র পিয়া ওথাইয়ো এএফপিকে বলেন, সরকার ১৪ হাজার ৮৮০ পুলিশ এবং সৈন্যদের র‌্যালি করার জন্য সমবেত করছে। আমাদের লক্ষ্য হল যে কোনো ধরনের সহিংসতা রোধ করা। উল্লেখ্য, বিক্ষোভকারীরা বলছে ১৩ জানুয়ারি ব্যাংকক অচলের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এদিকে ৮টি দেশে কর্মরত প্রবাসী থাই নাগরিকরা পিডিআরসি চলমান বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছে বলে দাবি করেছে পিডিআরসির মুখপাত্র আকানাত থমপেন। বুধবার ব্যাংকক পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আকানাত বলেন, ২ ফেব্র“য়ারি নির্বাচন বিলম্বিত করতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পদত্যাগের দাবিতে পিপলস্ ডেমোক্রেটিক রিফর্ম কমিটির (পিডিআরসি) আন্দোলনের যে রূপরেখা তাতে পরিপূর্ণ সমর্থন করেছে থাই প্রবাসীরা। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের সমর্থকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

No comments

Powered by Blogger.