জামায়াতের আগুনে দগদগে ক্ষত by তৌফিকুল ইসলাম বাবর, বাঁশখালী

'জামায়াত-শিবিরের নৃশংসতার আগুনে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতই পোড়েনি, পুড়েছে এ দুই আদালতের কয়েক হাজার মামলার নথিপত্র ও জায়গা-জমির মূল্যবান কাগজপত্র। তাই আদালত ভবনের পোড়া দাগে রঙের প্রলেপ পড়লেও বাঁশখালীর মানুষকে দীর্ঘদিন এ ক্ষতি বইতে হবে।' বাঁশখালী আদালত ভবন চত্বরে দাঁড়িয়ে সমকালকে এ কথা বলেন বাঁশখালী আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট দিলীপ কান্তি সুশীল। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় ঘোষণার পর বাঁশখালীতে স্মরণকালের ভয়াবহ তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। এতে পুড়ে যায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের প্রায় ১৩ হাজার মামলার নথিপত্র। ভস্মীভূত উপজেলা পরিষদের আরও প্রায় পাঁচ হাজার নথি। এছাড়া আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণের জন্য রাখা হাজার হাজার বই। আগুন দেওয়া হয় সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, ভাংচুর চালানো হয় মঠ-মন্দিরেও। এমনকি মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা এক বৃদ্ধকে পর্যন্ত কুপিয়ে হত্যা করে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। এছাড়া বাঁশখালীতে বছরজুড়ে আরও কয়েক দফায় তাণ্ডব চালায় তারা। জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত বাঁশখালীর বর্তমান অবস্থা জানতে খোঁজ নিয়েছে সমকাল।
সরেজমিনে দেখা যায় ক্ষতিগ্রস্ত আদালত ভবন, উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ও সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, মঠ-মন্দিরগুলোর গায়ে এখন আর পোড়া দাগ নেই। রঙের প্রলেপে রঙিন হয়েছে আদালত ও উপজেলা পরিষদ ভবন। পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ও মন্দির। তাই সহজে দেখে বোঝার উপায় নেই আগুনে জ্বলেছিল এসব স্থাপনা। তবে এখনও নৃশংসতার ছাপ রয়েছে উপজেলা পরিষদের পুরনো এক হলরুমে। এখানে ছাইয়ের পাহাড় হয়ে পড়ে রয়েছে পুড়ে যাওয়া বই ও আসবাবপত্রগুলো। বিভীষিকাময় সেদিনের কথা মনে করতে গিয়ে এখনও শিউরে ওঠেন বাঁশখালীর মানুষ। জরুরি নথিপত্র না থাকায় নিত্য সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আদালত ও প্রশাসনকে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাঁশখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর স্টেনোগ্রাফার আবদুল আউয়াল সমকালকে বলেন, 'নথি পুড়ে যাওয়ায় মামলাগুলো পুনর্গঠনে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আদালত সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের মাধ্যমে ও পুলিশের কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করে বাদীর উপস্থিতিতে মামলাগুলো পুনর্গঠন করতে হচ্ছে। এভাবে প্রায় ১০ মাসে বিচারাধীন মাত্র শ'খানেক মামলা পুনর্গঠন করা গেছে।'
দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির বিবরণ দিয়ে অ্যাডভোকেট দিলীপ কান্তি সুশীল জানান, এমন অনেক মামলার নথিপত্র পুড়ে গেছে, যেগুলো রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। নথি পুড়ে যাওয়ায় মামলাগুলো নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। নতুন করে করতে হচ্ছে শুনানি। এতে বিচারপ্রার্থীদের বড় অঙ্কের অর্থ ও সময় লেগে যাবে। অনেক মানুষের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।'
আদালত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, 'নথির অভাবে ডাকাতি-হত্যাসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলার অনেক আসামির পার পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে ডাকাতিসহ যেসব মামলার বাদী পুলিশ। নথি না থাকায় সেসব মামলার আসামিরা এখন আদালতে হাজিরাই দিচ্ছে না। তাদের বিচারের মুখোমুখি করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।'
বাঁশখালী থানার ওসি কামরুল হাসান সমকালকে বলেন, 'মামলার নথি পুড়ে যাওয়ায় আদালতকে নতুন করে নথি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। থানা থেকে ফৌজদারি মামলার যেসব নথি হচ্ছে আদালতে তা সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে অনেক আগের হওয়ায় নথিগুলো খুঁজে বের করতে সময় লেগে যাচ্ছে।'

No comments

Powered by Blogger.