হরতালে রাজধানীতে ব্যস্ত জনজীবন

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অবরোধসহ তিন দিনের হরতালের শেষ দিন বুধবার রাজধানীতে জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। ব্যস্ত সময় পার করেছেন নগরবাসী। কোনো কোনো স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। রাস্তায় প্রচুর গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলেছে। ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন গন্তব্যেও চলেছে বাস। পিকেটারদের কোনো তৎপরতা ছিল না। বিপণিবিতানসহ দোকানপাট খোলা ছিল। এদিকে গতকাল সন্ধ্যার পর ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে দূরপাল্লার বাস ছাড়তে শুরু করে।
গতকাল সন্ধ্যায় শেষ হয় এ হরতাল। সোমবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ডাকা হরতাল বাড়িয়ে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত করা হয়। মঙ্গলবার বিএনপির কয়েক নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বাড়ানো হয় এ কর্মসূচি। রোববারের নির্বাচনের ফল বাতিলের দাবিতে সোমবার থেকে ওই হরতাল ডাকা হয়েছিল। ১ জানুয়ারি থেকে চলে আসা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। এদিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশ এলাকায় হরতাল-অবরোধ সমর্থকদের কোনো তৎপরতা ছিল না। কার্যালয় ঘিরে যথারীতি নিরাপত্তারক্ষীদের উপস্থিতি ছিল। হরতাল-অবরোধ পালনকালে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা ও আহতদের সুস্থতা কামনায় আগামীকাল শুক্রবার দোয়া দিবস পালন করবে ১৮ দল। নির্বাচন বাতিলের দাবিতে শনিবার সারাদেশে জেলা-উপজেলা ও থানায় বিক্ষোভ পালন করবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন এ জোট। গতকাল গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সাভার, ধামরাই, পাটুরিয়া, মানিকগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের আরও কিছু গন্তব্যে বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেটের কিছু বাস চলেছে।
এদিকে, টানা অবরোধ ও হরতালের মধ্যে গতকাল কিছু বিপণিবিতান ও দোকানপাট খোলা দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দিনের পর দিন দোকান বন্ধ রেখে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বাধ্য হয়ে তারা ঝুঁকি নিয়েই দোকান খুলছেন। তা না হলে না খেয়ে মরতে হবে। ধানমণ্ডির জেনেটিক প্লাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অবরোধের মধ্যেও মার্কেট খোলা রাখা হয়েছে। তবে ক্রেতা নেই। মালিকরা এখনও কর্মচারীদের ডিসেম্বর মাসের বেতন দিতে পারেননি। ব্যবসার বর্তমান যে অবস্থা, তাতে কবে নাগাদ বেতন দিতে পারবেন, তারও ঠিক নেই। সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া-পুরান ঢাকা :পুরান ঢাকার কোথাও হরতালে সাড়া মেলেনি। যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, দোলাইরপাড় ও ডেমরা এলাকার জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি যাত্রীবাহী বাসও চলেছে। যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ এবং পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়, বংশাল ও ফুলবাড়িয়া এলাকায় যানজট লক্ষ্য করা গেছে। এসব সড়কে পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবির গাড়ি টহল দিয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনির আখড়া-সাইনবোর্ড এলাকায় সেনাসদস্যরা গাড়িতে টহল দিয়েছেন। এ এলাকার বেশিরভাগ দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল খোলা। রাতে ছেড়েছে দূরপাল্লার বাস :বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সমকালকে জানান, সন্ধ্যার পর ঢাকা থেকে দেশের সব রুটের বাস ছাড়তে শুরু করে। বুধবার রাতে অল্প সংখ্যক বাস চলাচল করলেও আজ বৃহস্পতিবার থেকে সব পরিবহনের বাস পুরোদমে চলবে বলেও জানান তিনি। সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা ও নগর বাস টার্মিনাল শ্রমিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন সমকালকে বলেনন, সন্ধ্যায় হরতাল শেষ হওয়ার পর একটি-দুটি করে বাস ছাড়তে শুরু করে। রাতে শ্যামলী ও হানিফ পরিবহনের বাস চট্টগ্রাম; তিশা ও এশিয়া পরিবহনের বাস কুমিল্লা; যাত্রীসেবা ও একুশে পরিবহনের বাস নোয়াখালী এবং পদ্মা পরিবহনের বাস চাঁদপুরের উদ্দেশে সায়েদাবাদ টার্মিনাল ছেড়ে যায়।
গাবতলী বাস টার্মিনালে ঈগল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার রাসেল সমকালকে জানান, রাত ১০টা ও ১১টায় তাদের দুটি বাস বরিশালের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে। এ ছাড়া সাকুরা ও শাপলা পরিবহনের একটি করে বাসও গাবতলী থেকে ছেড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.