মেসিকে বিক্রিই করে দেবে বার্সা!

'মেসি বিক্রির জন্য নয়'_ এ কথা বারবারই ভেসে আসে বার্সেলোনার কোচ কিংবা কর্মকর্তাদের মুখ থেকে। তবু বাতাসে ভেসে বেড়ানো গুঞ্জনের লাগাম টেনে ধরা যায় না। বরং, গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, মেসিকে কিনতে প্রস্তুত ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। মেসির জন্য তারা এত বেশি অর্থ দিতে চায় যে, ওই অর্থ দিয়ে স্প্যানিশ লা লিগাতেই দু-একটি ছোট ক্লাব চালানো সম্ভব। অর্থের পরিমাণটা হলো, মেসির বাই আউট ক্লজ। অর্থাৎ ২৫০ মিলিয়ন ইউরো। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। চলতি মৌসুমের শুরুতে ১০০ মিলিয়ন ইউরোয় গ্যারেথ বেলকে কিনে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এটা বেলের মূল্যের দ্বিগুণেরও বেশি, প্রায় আড়াইগুণ। নিউইয়র্কভিত্তিক অনলাইন ওয়ান ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস গতকাল একটি রিপোর্টে প্রকাশ করেছে, 'এত বেশি অর্থের প্রস্তাবে মেসিকে বিক্রি করে দেওয়ার চিন্তাও এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বার্সা কর্মকর্তাদের মাথায়।'
রিপোর্টটির ভিত্তি খুব একটা নেই। কয়েকটি বিষয়কে সামনে এনে এতে পিএসজির প্রস্তাবের সম্ভাব্য পরিণতিই আলোচনা করেছেন বিশ্লেষক ডানকান ক্যাসলস। এর মধ্যে তিনি সবচেয়ে বড় করে দেখিয়েছেন অর্থের পরিমাণ। এ ছাড়া সম্প্রতি বার্সার পাওয়ার হাউসে মেসির অনধিকার প্রবেশের বিষয়টাও সামনে আনা হয়েছে। ডানকানের মতে, ক্লাবের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার কারণে হয়তো মেসিকে আর বাড়তে দিতে চাচ্ছেন না বার্সা কর্মকর্তারা। রিপোর্টটিতে লেখা হয়েছে, মেসির যে বাজারমূল্য, তার পুরোটাই এখন বিদ্যমান। সামনেই ২৭তম বসন্তে পা রাখতে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন এ ফুটবলার। এরপর তার এ ফর্ম আর কতদিন থাকে, সেটা প্রায় অনিশ্চিত। ঘন ঘন ইনজুরিতেও আক্রান্ত হচ্ছেন তিনি। সুতরাং বাজারমূল্য পূর্ণ থাকতেই আর্থিকভাবে 'কল্পনাতীত' লাভবান হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবে কি করবে না, তা নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেছেন বার্সা কর্মকর্তারা। অন্তত ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেও যদি মেসিকে বিক্রি করা যায়, তাহলে এতবড় মূল্যের ট্রান্সফার ফির পুরোটাই আসবে বার্সার পকেটে। এতে পুনর্গঠন এবং আরও ভালোমানের বেশ কয়েকজন ফুটবলার কিনে ক্লাবকে আবারও সেরার পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব। ব্যবসায়িক এ হিসাব-নিকাশই কষছেন এখন বার্সা প্রেসিডেন্ট সান্দ্রো রসেল। কারণ, যতদিন সর্বোচ্চ ফর্মে থাকছেন মেসি, ততদিন তার কাছ থেকে সার্ভিস তো বার্সা পেলই, এখন ব্যবসার খাতিরে তাকে বিক্রি করে দিলে ক্লাবের তেমন কোনো ক্ষতিও হবে না আর। এ ছাড়া মেসি এমন এক পর্যায়ে চলে গেছেন যে, কোনো খেলোয়াড় কিংবা কোচ তার কাছে নস্যি। কোচরা পর্যন্ত তার মুখের ওপর কথা বলতে সাহস পান না। সম্প্রতি মেসিকে নিয়ে প্রকাশিত এক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে দাবি করা হয়েছে, 'একবার পেপ গার্দিওলা তাকে বদলি হিসেবে মাঠে নামান। এর পরদিন রাগ করে মেসি অনুশীলনেই যোগ দেননি। এমনকি কোচের কথা পর্যন্ত শোনেননি।' একই সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদোর পারিশ্রমিকের সঙ্গে মিলিয়ে মেসির পারিশ্রমিক বাড়ানোর প্রস্তাবও বেশ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে বার্সার বোর্ড অব ডিরেক্টরদের মধ্যে। ট্যাক্স ছাড়া রোনালদোর পারিশ্রমিক এখন বার্ষিক ২১ মিলিয়ন ইউরো। মেসির সঙ্গে ২০১৮ পর্যন্ত বার্সার চুক্তি, বার্ষিক ১৪ মিলিয়ন ইউরোর। এ ব্যাপারে রোনালদোর সমকক্ষ হওয়ার ব্যাপারে নানা আলোচনা শুরু হলে বার্সার সহসভাপতি হ্যাভিয়ের ফাউস বলেছেন, 'আমরা তো আর প্রতি ছয় মাস অন্তর কারও চুক্তি নবায়ন করতে পারব না!' জবাবে ত্রুক্রদ্ধ মেসি বলেছিলেন, 'ফাউস তো ফুটবলই বোঝেন না। তিনি এ সম্পর্কে কী আর মন্তব্য করবেন?' যদিও সান্দ্রো রসেল মেসিকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে মেসির রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে এরই মধ্যে প্রায় শত মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে নেইমারকে পেয়ে গেছে বার্সা, যার বয়স মাত্র ২১ বছর। বার্সার একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি মেসি ইনজুরিতে পড়ার কারণে বার্সা ক্যাম্পে তাই কোনো দুশ্চিন্তাই ভর করেনি কারও মনে।

No comments

Powered by Blogger.