মন্ত্রী-সাংসদদের সুপারিশ-ব্যবস্থা বাতিল হোক ঘাট ইজারা



তাঁরা ছাপোষা আমলা নন, রীতিমতো মন্ত্রী ও সাংসদ। সমাজপতিদের পতি। তাঁদেরই সুপারিশে ৩৬২টির মধ্যে ১৪৩ ঘাট নিজেদের লোকদের ইজারা-সংক্রান্ত অনিয়মের সংবাদটি তাই খুবই হতাশাব্যঞ্জক।
মাথায় যদি পচন ধরে, তাহলে শেষরক্ষার উপায় থাকে কোথায়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খোলা দরপত্রের নিয়ম থাকার কারণে সরকার লাভবান হয়েছিল। মন্ত্রী ও সাংসদদের সুপারিশ-ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর দুর্নীতি বেড়েছে, আয় কমেছে। তাই চলতি নিয়ম পাল্টানো শ্রেয়।
খোলা দরপত্রে স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা ফিরে আসবে। ছয় বছর আগে যে ঘাটের ইজারামূল্য তিন কোটি ২৮ লাখ ছিল, এখন তা সোয়া তিন কোটি। কারণ, সদাশয় ইজারাদারেরা নাকি যাত্রীদের মালামাল বিনা পয়সায় পার করতে দেন। কিন্তু বাস্তবতা যাত্রীসাধারণ প্রতিনিয়ত হাড়ে হাড়ে টের পান। ইজারাদারের কিংবা তাঁদেরই ছত্রচ্ছায়ায় থাকা লোকজন যাত্রীদের কাছ থেকে কীভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়, তা কারও অজানা নয়। ঘাট ইজারা নিয়ে যে কাণ্ড ঘটেছে, তাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ নাকচ করা যায় না। এটা খতিয়ে দেখতে উপযুক্ত তদন্ত কমিটি চাই। এটা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যেই সরষের ভূত লুকিয়ে থাকতে পারে।
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের খোঁড়া যুক্তিটি মোটেই অভাবনীয় নয়। অন্যের কাঁধে দোষ চাপানোর চেনা রাস্তায় হাঁটা। তিনি বলেছেন, ইজারা নীতিমালার বিশেষ বিধানটি বর্তমান সরকারের করা নয়; চারদলীয় জোট সরকারের সময়েও চালু ছিল। আহা সত্যিই তো। কী করে তা থেকে বেরোবেন? ভোটাররা কিরে কেটে দিয়েছেন আর কি। বহু ক্ষেত্রেই এমন খোঁড়া যুক্তি দেওয়া হয়ে থাকে। আমরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত। তাঁর কথা হলো, আমাদের রাজনীতির যে সংস্কৃতি, সেখানে সুপারিশসর্বস্ব এমন বিধান অযৌক্তিক ও ক্ষতিকর। জাতীয় আয় কমে যায় এমন বিধান না থাকাই ভালো। তবে এই পরিহাসও মনে রাখতে হবে, আমরা যাচ্ছি কোথায়। মন্ত্রী-সাংসদের হাত যেখানে অশৌচ, সেখানে কাকে রেখে আমরা কাকে ভরসা করব?

No comments

Powered by Blogger.