নির্বাচনে নিষিদ্ধ হচ্ছেন ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতরা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশ্লিষ্ট একটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব রেখেছে।
আরপিওর ১২ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্যতাগুলোর মধ্যে বলা আছে, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আদালত অথবা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কেউ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দণ্ডিত হলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচনের যোগ্য হবেন না। কমিশনের ধারণা, এই বিধানটি সংশোধন না করলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩-এ সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাচনে নিষিদ্ধ রাখতে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। কারণ 'যুদ্ধাপরাধী' শব্দটি দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩-এর সব অপরাধকে বোঝানো যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে 'যুদ্ধাপরাধী' শব্দটির পরিবর্তে 'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩' শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করতে হবে।
গতকাল কমিশনের বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। কমিশন সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধবিষয়ক এই প্রস্তাবটিসহ কমিশনের আরপিও সংশোধনের চূড়ান্ত প্রস্তাব গতকালই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠনো হয়েছে।
এদিকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক রায়ে জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন এই দলের নিবন্ধন বাতিলের ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল সিইসি বলেন, 'রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে।' অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আরপিওতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে আবারও অন্তর্ভুক্ত করার কোনো প্রস্তাব দিচ্ছে না ইসি। নতুন দল হিসেবে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) নিবন্ধন এবং এ বিষয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির আপত্তির বিষয়ে সিইসি জানান, বিএনএফকে নিবন্ধিত করা হলে তার আগে এ বিষয়ে কারো আপত্তি আছে কি না তা জানার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে অযোগ্য রাখার বিধানটি ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত হয়। বিদ্যমান আরপিওতে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত ছাড়াও নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে এবং নির্বাচনে বিভিন্ন দুর্নীতিমূলক অভিযোগে কেউ দুই বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে তাঁকে ওই দণ্ডভোগ শেষ হওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে অযোগ্য রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীরা অযোগ্য থাকবেন সারা জীবন।
অবশ্য সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেউ যদি ১৯৭২ সালের 'বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ' বা দালাল আইনের অধীনে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে থাকেন তাহলে তিনি সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। দালাল আইনে দণ্ডিতরা ভোটার হওয়ারও যোগ্য নন এবং ভোটার না হলে নির্বাচনে কারো প্রার্থী হওয়ারও সুযোগ নেই। বিদ্যমান ভোটার তালিকা থেকে দালাল আইনে দণ্ডিতদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তাদের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা পাঠাতে বলে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬৯ জনের তালিকা পাঠায়। কিন্তু ভোটার তালিকায় ওই ৬৯ জনের মধ্যে একজনের নাম ও বাবার নাম মিললেও গ্রামের নাম মিলছে না। এ ছাড়া তালিকাটিতে দালাল আইনে দণ্ডপ্রাপ্তদের সাজার বিষয়েও পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকায় কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, কমিশনের প্রস্তাব অনুুসারে আরপিও সংশোধন হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩-এ দণ্ডপ্রাপ্তদের জন্য তা প্রযোজ্য হবে।

No comments

Powered by Blogger.