শুভ জন্মদিন, গ্যাংনাম স্টাইল! by রাজীব হাসান

বিশ্বটাকে জয় করতে নাকি ১১ বছর সময় লেগেছিল মহাবীর আলেকজান্ডারের। পুরো বিশ্ব ঘুরে আসতে ৮০ দিন সময় নিয়েছিলেন ফিলিয়াস ফগ। সাইয়ের সময় লেগেছে চার মিনিট ১৩ সেকেন্ড!
মাত্র সোয়া চার মিনিটেরও কম সময়ের একটা ভিডিও দিয়েই বিশ্বজয় করে ফেলেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার এই অদ্ভুতুড়ে পপগায়ক। অবিশ্বাস্য, কল্পনাতীত সব ঘটনার জন্ম দিয়েছে তাঁর গ্যাংনাম স্টাইল। ইউটিউবের ইতিহাসে প্রথম ভিডিও হিসেবে এটি বিলিয়নের (১০০ কোটি) ঘর যে পেরিয়ে গেছে, সেই খবরও এখন পুরোনো। গ্যাংনাম স্টাইল ছুঁতে চলেছে ২০০ কোটির মাইলফলক! এক বছরে কেবল ইউটিউবেই এই ভিডিও দেখা হয়েছে প্রায় ১৭৫ কোটি বার! কেবল একটি ভিডিও দিয়ে কীভাবে বিশ্বজয় করা যায়, সেটার ভালো উদাহরণ হয়ে থাকবেন পার্ক জায়ে-স্যাং। ভাবছেন এই পার্কটা আবার কে? সাইয়ের পিতৃপ্রদত্ত নাম, সাই নামের আড়ালে হারিয়ে গেছে যেটা। সাই নামটি নেওয়া হয়েছে ‘সাইকো’ থেকে!
নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাই নিজমুখে স্বীকার করেছেন, এভাবে এত তাড়াতাড়ি বিশ্বব্যাপী তারকা বনে যাবেন, সেটা তাঁর সুদূরতম কল্পনাকেও হার মানিয়েছে, ‘আমি এ রকম কিছু আশা করিনি। কী আর বলব। সবকিছু খুব দ্রুত ঘটে যাচ্ছে।’
২০১২ সালের ১৫ জুলাই ইউটিউবে নিজের অদ্ভুত লিরিক, তার চেয়েও অদ্ভুত নাচের ভঙ্গির এই ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন সাই। ওই বছরের সেপ্টেম্বরেই গিনেসে নাম ওঠে ভিডিওটির। ইউটিউব কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, ‘২৮ সেপ্টেম্বর (২০১২) পর্যন্ত ২২২টি দেশ থেকে এই ভিডিও দেখা হয়েছে, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্রের চেয়েও যেটি বেশি।’
গ্যাংনাম-জ্বর জাতিসংঘে পৌঁছে যাওয়ার ব্যাপারটি খোলাসা হয়েছে যেদিন সাইয়ের সঙ্গে ঘোড়ানৃত্যে তাল মিলিয়েছেন বিশ্ব অভিভাবক সংস্থাটির প্রধান বান কি মুন। গানটিকে বান কি মুন আখ্যা দিয়েছিলেন ‘বিশ্বশান্তির একটি শক্তি’ হিসেবে। গ্যাংনামের তালে তালে নেচেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। সহধর্মিণী মিশেল ওবামার সঙ্গে ব্যক্তিগত নাচের আসরে এই তালে নাচতে চেয়েছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টটিও। গুগলের নির্বাহী চেয়ারম্যান এরিক স্মিডও পূর্ব এশিয়া সফরে এসে নেচেছেন গ্যাংনামের ছন্দে। নেচেছেন ক্রিকেট তারকা ক্রিস গেইল, টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচ, বক্সার ম্যানি প্যাকুইয়াও, ফুটবলার এডিনসন কাভানি।
শুধু তারকা নয়, গ্যাংনামের ছন্দে নেচেছেন থাই নৌবাহিনীর সদস্য থেকে ফিলিপাইনের কারাবন্দীরা। তিব্বত মুক্তি আন্দোলনের কর্মীরা এর মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন প্রতিবাদের ভাষাও!
কেন গ্যাংনামের এত জনপ্রিয়তা। এ নিয়ে রীতিমতো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা করা হচ্ছে। মোটের ওপর খুবই সাধারণ একটা গান। সাধারণ এর কথা, সুরটাও আহামরি নয়। তার পরও কেন গ্যাংনামের এত জয়জয়কার? গ্যাংনামের সবচেয়ে সব শক্তি এর নাচের ভঙ্গিটাই। মনে হবে, অদৃশ্য ঘোড়ায় টগবগিয়ে ছুটছে, সাই। ৩৫ বছর বয়সী এই কোরীয় শিল্পীর অদ্ভুতুড়ে নাচের ভঙ্গির সঙ্গে নিজ দেশের ভক্তরা অবশ্য আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন। ‘আরও বড় কিছু’ করার জন্য টানা ৩০ রাত নির্ঘুম কাটিয়ে অবশেষে ঘোড়ানৃত্যটির আইডিয়া মাথায় আসে সাইয়ের। জানা গেছে, আরও অনেক পশু নিয়েও গবেষণা করেছিলেন সাই!
গ্যাংনাম হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের একটি অভিজাত শহর। এই শহরের বাসিন্দাদের চাকচিক্যময় স্টাইলও হলো গ্যাংনাম স্টাইল। গানের শুরুতেই যে বলা হয় ‘অপ্পান’, এটার মানে বাংলায় অনেকটা ‘ভাইজান’-এর মতো। দক্ষিণ কোরিয়ার নারীরা বয়সে বড় ভাইদের এভাবেই আদর করে ডাকেন।
এই ভিডিও দিয়ে কয়েক মিলিয়ন ডলারও আয় করেছেন সাই। নানা খাত থেকে এই আয় এসেছে। এর মধ্যে কেবল ইউটিউবের বিজ্ঞাপন ৮০ লাখ ডলারেরও বেশি আয় করেছে! গ্যাংনামের সাফল্যের আরেকটি বড় সূত্র হলো এই নাচের কোনো কপিরাইট নেই!
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, নিউজ ইয়াহু, উইকিডিপিয়া

No comments

Powered by Blogger.