কোটা নিয়ে ভাঙচুরকারীরা চাকরি পাবে না : হাসিনা-আ. লীগ ক্ষমতায় না এলে চাকরি হারাবে লাখ লাখ গার্মেন্টকর্মী

বিসিএস পরীক্ষায় কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের নামে ভাঙচুরকারীদের সব ধরনের চাকরিতে অযোগ্য করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা প্রথা নিয়ে আন্দোলনের নামে যারা ভাঙচুর করেছে, তাদের ছবি সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে।
ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে চাকরির পরীক্ষার সময় তাদের ডিসকোয়ালিফাই করা হবে। তারা যেন কোনো ধরনের চাকরি না পায়, তার পদক্ষেপও নেওয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে দলের সভাপতি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় না এলে লাখ লাখ গার্মেন্টকর্মী চাকরি হারাবে। সম্প্রতি নারীদের নিয়ে কটূক্তি করায় হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন নারীদের নিয়ে অনেক কথা শুনতে হচ্ছে। মেয়েদের আয়-উপার্জনের পথ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ও বিএনপির নীরবতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় প্রশ্নে নীরবতাই প্রমাণ করে, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিএনপির সমর্থন রয়েছে। তারা এই বিচার চায় না। তবে জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় অবশ্যই কার্যকর হবে। আর যারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও মানুষ হত্যা করছে, তাদের বিচারও একদিন বাংলার মাটিতেই হবে।
চাকরিতে কোটা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যারা মেধাবী তাদের জন্য সর্বোচ্চ কোটা রয়েছে। মেধাবীদের মেধার বিকাশে সরকার সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছে। মেধাবীরা সুযোগ-সুবিধা তো পাচ্ছেই। তাহলে কিভাবে আন্দোলনের নামে এমন ভাঙচুর করা হয়? অন্যকে প্রাপ্তি থেকে কেন বঞ্চিত করতে হবে? যার যার প্রাপ্য তো নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা আন্দোলনের নামে ভাঙচুর করছে, স্থাপত্য ধ্বংস করছে, তারা মেধাবী কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। মেধাবীরা এমন অপরাধ করতে পারে না। তাহলে এরা কারা? কারা এদের উসকানি দিচ্ছে? এটাও খুঁজে দেখতে হবে। তিনি বলেন, 'যারা ভাঙচুর করছে, তারা চাকরি পাবে না। এদের ছবি তুলে ভিডিও করে পিএসসিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের বলে দেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে এরা যখন চাকরির ভাইভা পরীক্ষায় আসবে, তখন যেন এদের চাকরি দেওয়া না হয়। সরকারি কিংবা অন্য কোনো ধরনের চাকরিতে যেন এরা ঢুকতে না পারে, সে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এরা চাকরি পাওয়ার অধিকারও রাখে না।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেয়েদের কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন কেন? মেয়েরা কি চাকরি পাবে না? মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেটাও কি বন্ধ করে দিতে হবে? মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছেন বলেই পিএসসি হয়েছে, এ দেশের ছেলেমেয়েদের চাকরি হচ্ছে। সেই মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে খাটো করতে এমন অপতৎপরতা কেন? এ দেশে কি মুক্তিযোদ্ধারা থাকতে পারবেন না? রাজাকার আলবদররাই থাকবে?
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যখন একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় হচ্ছে, বিএনপি কোনো কথাই বলছে না। তারা কোনো প্রতিক্রিয়া না দেওয়ায় এ রায়ে তারা সন্তুষ্ট কি অসন্তুষ্ট, সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। এতেই বোঝা যায় তারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা জাতি চায় একাত্তরে যারা গণহত্যা করেছে, লুটতরাজ, অগি্নসংযোগ ও ধর্ষণ করেছে, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক। কেবল বিচার চায় না একটি দল- বিএনপি। এটাই স্বাভাবিক। জন্মের পর থেকেই যারা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে আসছে, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করে তাদের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে, তাদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছে, তারা কখনো বিচার চাইতেও পারে না।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের প্রতিবাদে জামায়াতের হরতালের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য পবিত্র রমজান মাসে হরতাল ডেকে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। রমজান মাস সংযমের মাস। যারা ইসলামে বিশ্বাস করে তারা কিভাবে এই মাসে হরতাল দিয়ে নৈরাজ্য করে? রায় দিয়েছেন আদালত। আর এই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কিভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়। যারা দিনমজুর, হরতাল দিয়ে তাদের পেটেও লাথি মারা হচ্ছে। এগুলোও এক ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ। তিনি বলেন, যারা অপরাধী তাদের বিচার হবে, শাস্তি পাবেই। এটা সংবিধান ও আইনের কথা।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সভাপতিত্বে বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, কেন্দ ীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্টের কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে। ঈদের পরে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের প্রস্তুতি, দল গোছানো- সব কাজ করা হবে। তিনি বলেন, দলের সহযোগী সংগঠনসহ কেন্দ ীয় নেতাদের সমন্বয়ে টিম করে সারা দেশ সফর করা হবে। তাঁর পদত্যাগ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফ বলেন, 'গুজব নিয়ে কী বলব? আমি তো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পালিয়ে যেতে পারি না।'
এদিকে বৈঠক সূত্র নিশ্চিত করে, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা রমজান মাসে দলের সব কেন্দ ীয় নেতা, সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে যার যার নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, রমজান মাসে ইফতার পার্টি আয়োজন করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকের ইফতার বিরতির পর একপর্যায়ে শেখ হাসিনার একমাত্র ছেলে কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয় আওয়ামী লীগ কেন্দর সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

No comments

Powered by Blogger.