কেন এই হরতাল?একই অপরাধ করছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা গোলাম আযম ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির আহূত হরতালের গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল চতুর্থ দিন।
আর প্রথম হরতালের আগের দিন, অর্থাৎ গত রবিবার থেকেই শুরু হয় বোমাবাজি, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক তাণ্ডব। পুরো সপ্তাহটাই কেটে যায় এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। চার দিনের হরতালে কয়েক শ গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কুপিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আবার পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, গত চার দিনে মারা গেছে কমপক্ষে ৯ জন, আহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। কেন এই হত্যা? কেন এই ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ? হরতালের কারণে বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর ফলে পবিত্র রমজান মাসে জনজীবনে যে দুর্ভোগ নেমে এসেছে, তার দায় কে নেবে?
দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারিক কার্যক্রম চলে আসছে। সেই আইনি লড়াইয়ে জামায়াতের আইনজীবীরা অংশ নিয়েছেন। রায়ের বিরুদ্ধে আপিলও করছেন। তার পরও হরতালের নামে তাদের এই সহিংসতা কেন? তাহলে কি দেশে কোনো অপরাধের বিচার হবে না? মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতনকারীদের বিচার হবে না? মুজাহিদ ছিলেন সে সময়ে গুপ্ত হত্যাকারী সংগঠন আলবদর বাহিনীর শীর্ষ নেতা। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তথা বাঙালির বিজয়ের প্রাক্কালে দেশকে মেধাশূন্য করার পাকিস্তানি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল জামায়াতে ইসলামীর এই সশস্ত্র সংগঠনটি। তারা তালিকা করে দেশের সেরা মানুষগুলোকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। সেই নরপশুদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার জন্য আজ একটি স্বাধীন দেশে তাদেরই উত্তরসূরিরা তাণ্ডব চালায়- এটা ভাবতেও অবাক লাগে। আদালত জামায়াতে ইসলামীকে একটি 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে রায়ে উল্লেখ করার পরও ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশের সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না- এটিও কম অবাক করা বিষয় নয়! আর তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর প্রধান হিসেবে সে সময়ে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সব কর্মকাণ্ডের দায়ভার অবশ্যই গোলাম আযমকে বহন করতে হবে। আদালতের রায়ে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। শুধু একাত্তরেই নয়, পরবর্তীকালেও পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের নামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে তিনি কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন, তারও তো বহু দালিলিক প্রমাণ রয়েছে। তাঁর সেসব কর্মকাণ্ডেরও তো বিচার হওয়া উচিত। অথচ তাঁর মুক্তির দাবি করে আজ এ দেশেই তাণ্ডব চালানোর স্পর্ধা দেখানো হচ্ছে!
যে দেশ বা সমাজে অপরাধের বিচার হয় না, সেখানে সভ্যতা থাকে না। আমরা কোনো অসভ্য সমাজে পরিণত হতে চাই না। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাজাকার-আল বদরসহ যারাই মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, প্রত্যেকের সুষ্ঠু বিচার চাই। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী বর্তমান অপরাধীদেরও কঠোর হাতে দমন করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.