হাসপাতালে গোলাম আযমের বিলাসী বসবাস

গ্রেপ্তারের পর থেকে হাসপাতালেই আছেন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড়ানো অপশক্তির শিরোমণি গোলাম আযম। গত বছর ১১ জানুয়ারি গ্রেপ্তারের পর থেকে অসুস্থতার অজুহাতে তাঁকে রাখা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসালয়ে।
এত দিন তাঁর এই হাসপাতালবাস নিয়ে মানুষের মধ্যে কম-বেশি কৌতূহল থাকলেও গত সোমবার তাঁর বিরুদ্ধে ৯০ বছরের সাজা ঘোষণার পর বিষয়টি আরো জোরালো হয়েছে। তাঁকে কেন কারাগারে না রেখে দিনের পর দিন হাসপাতালে রাখা হচ্ছে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ সত্ত্বেও আদালত তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ না দেওয়ার ক্ষোভের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে তাঁকে হাসপাতালে বিলাসী বসবাসের সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষোভ। তাঁর স্বাস্থ্য বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক বলেছেন, 'বয়স অনুপাতে গোলাম আযম সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন।'
গতকাল দুপুরে ওই হাসপাতালের প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, 'আমরা চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে এলে একটি কেবিন বা সিটের জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হয়, কত বয়োবৃদ্ধ মানুষকে দেখি হাসপাতালের চত্বরে শুয়ে থাকতে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের তাড়িয়ে দেয়, কিন্তু কুখ্যাত খুনি গোলাম আযম অসুস্থ না হওয়া সত্ত্বেও তো ঠিকই বছরের পর বছর জামাই আদরে এখানে থাকছে।'
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালেরই একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, 'গোলাম আযমকে কেন এ হাসপাতালে রাখা হচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। দেশের অনেক কারাগারে তাঁর মতো বয়স্ক আরো অনেক কয়েদি আছেন, তাঁরা তো এমন মাসের পর মাস হাসপাতালে থাকার সুযোগ পান না। তা ছাড়া মানবতাবিরোধী শীর্ষ এ অপরাধীকে এখন আর এ হাসপাতালে রাখার কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না।'
একই হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক বলেন, 'এর আগে কোনো হাজতি বা কয়েদি একটানা এত দিন এ হাসপাতালের প্রিজন সেলে থাকার সুযোগ পায়নি। জায়গার অভাবে অনেক আসামিকে এখানে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। অনেককেই সকালে কারাগার থেকে এনে আবার দুপুরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাহলে গোলাম আযমের মতো এত বড় অপরাধীর জন্য কেন এ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়।'
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া বলেন, 'আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হলেও প্রিজন সেল হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে। আমরা শুধু তাদের প্রয়োজনমতো সাপোর্ট দিয়ে থাকি। প্রিজন সেলে কাকে রাখবে না রাখবে তা ঠিক করে থাকে কারা কর্তৃপক্ষ।'
হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রিজন সেলের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি ডাবল বেডের রুমে থাকছেন গোলাম আযম। তাঁকে দেখভালের জন্য হাসপাতালের একজন কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন সহায়তাকারী হিসেবে। সাধারণ ওই কর্মী রুমের বাইরে থাকেন। প্রয়োজনমতো তাঁকে ভেতরে ডেকে পাঠান গোলাম আযম।
ওই কর্মী বলেন, 'রায়ের পর গোলাম আযমের জীবনযাপনে কোনো পার্থক্য দেখছি না। রায়ের দিন প্রিজন সেলে ফিরে অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক ইফতার করেছেন, রাতের খাবার ও নিয়মমতো সেহরি খেয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা তাঁকে প্রয়োজনীয় চেকআপ করেছেন। তিনি যথারীতি রোজা রাখছেন এবং ইফতার করছেন। রুমের ভেতরে হাঁটাচলা করছেন। এত বয়স্ক একজন মানুষ হিসেবে তিনি বেশ ভালো আছেন।' তিনি বলেন, বয়সের কারণে স্বাভাবিক যে সমস্যাগুলো গোলাম আযমের আছে, তার উপযুক্ত চিকিৎসা চলছে।
এ হাসপাতালে গোলাম আযমের চিকিৎসা টিমের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, গোলাম আযমের বার্ধক্যজনিত সমস্যাগুলোই আছে। চোখে-কানে কিছু সমস্যা আছে, আছে উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যাও। তবে সব কিছুরই চিকিৎসা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.