বান কি মুনের হুঁশিয়ারি'বিপজ্জনক বিভেদ' সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমারে

মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। দেশটিতে বৌদ্ধ ও মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মধ্যে 'ভয়াবহ বিভক্তি' সৃষ্টি হয়েছে বলে গত বুধবার মিয়ানমার সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে বসবাসরত প্রায় ১০ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব নিয়ে সংকট সমাধানেরও আহবান জানান তিনি। বিশ্বের মুসলিম নেতারা রোহিঙ্গাদের 'দুর্দশা' নিরসনে জাতিসংঘকে জোরালো পদক্ষেপ জানানোর পরপরই বান কি মুন এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ২০০ জনকে গ্রেপ্তার ও প্রায় ৫০০ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে গত মঙ্গলবার জানিয়েছে মিয়ানমার।
গত মার্চে মিয়ানমারে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে দাঙ্গায় ৪৪ জন মারা যায়। হতাহতের অধিকাংশই ছিল মুসলিম রোহিঙ্গা। গত বছর পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দুই শতাধিক লোক নিহত ও দেড় লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয়হীন হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকাংশই মুসলিম। মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ তোলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে দাঙ্গার সময় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালনের এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুসলিমদের ওপর হামলায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
নিউ ইয়র্কে কূটনীতিকদের উদ্দেশে বান কি মুন বলেন, 'একটি দেশের সরকার জনগণের জানমাল রক্ষার ও দুষ্কৃতকারীদের উপযুক্ত শাস্তির আশ্বাস দেয়। এ ব্যাপারে আন্তরিক ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিলে আরো বিপর্যয়, সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার ও নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির আশঙ্কা থাকে।' তিনি মিয়ানমার সরকারকে 'সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের দাবি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার' আহবান জানান।
এর আগে গত বুধবার মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) জাতিসংঘের কাছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবে জোরালো ভূমিকা রাখার দাবি করে। জাতিসংঘে ওআইসির প্রধান দূত ও জিবুতির রাষ্ট্রদূত রোবলে ওলহায়ে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলাকে 'নৃতাত্তি্বকভাবে তাদের নির্মূলের চেষ্টা' বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, 'মিয়ানমার সরকার সহিংসতা বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা চাই জাতিসংঘ বিশ্বের বিবেক হিসেবে এ ব্যাপারে স্পষ্ট ও জোরালো ভূমিকা পালন করুক।' জাতিসংঘে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আল-মুয়াল্লেমি বলেন, 'মিয়ানমার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মধুচন্দ্রিমা পালন করছে। কিন্তু তাদের এই মধুচন্দ্রিমার ভিত্তি গড়ে উঠেছে মুসলিমদের লাশের ওপর।'
মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী আয়ে মিন্ত গত মঙ্গলবার জানান, গত বছর জুন ও অক্টোবরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত এক হাজার ২০০ লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দাঙ্গাসংক্রান্ত প্রায় ২০০টি মামলার বিচার শেষ হয়েছে এবং প্রায় ৫০০ লোককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৪৫টি মামলায় ৬৬২ জনের বিচার চলছে। রাখাইনে এখন ছয় হাজারেরও বেশি পুলিশ ও যথেষ্ট পরিমাণ সেনা মোতায়েন রয়েছে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে অস্ট্রেলিয়ার সাহায্য : রাখাইন রাজ্যে আশ্রয়হীন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সাহায্যের জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকার ৩২ লাখ ডলার সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে। মিয়ানমান সফরের সময় অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বব কার গত বুধবার এ তথ্য জানান। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনসহ মিয়ানমারের অন্যান্য খাতে মোট ৯০ লাখ ডলার সাহায্য করছে অস্ট্রেলিয়া। সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.