কোটা বাতিলের আন্দোলন ছড়াচ্ছে ঢাকার বাইরেও

বিসিএসসহ সব ধরনের সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ইতিমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। একই দাবিতে খুলনা ও রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেন একদল শিক্ষার্থী।
জাহাঙ্গীরনগর : বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এক ঘণ্টা অবরোধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। 'সাধারণ শিক্ষার্থী' ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিভিন্ন বিভাগের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখেন। এ সময় তাঁরা 'জাহাঙ্গীরনগর দিচ্ছে ডাক, কোটা প্রথা নিপাত যাক'- এ স্লোগান দিতে থাকেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। অবরোধের ফলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী।
প্রক্টর মো. মজিবর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সমথর্ন করি। কিন্তু ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করাকে সমর্থন করি না। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধ তুলে নিতে বললে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ত্যাগ করে।'
'সাধারণ শিক্ষার্থী'র আহ্বায়ক আবির হায়দার (ইতিহাস বিভাগ, ৩৭তম ব্যাচ) কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করি, স্বাধীনতা অর্জনে তাঁদের ত্যাগকে গভীরভাবে স্মরণ করি। বাংলাদেশকে স্বনির্ভর ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে হলে প্রতিযোগিতামূলক সব পরীক্ষা থেকে কোটা প্রথা উঠিয়ে দিতে হবে। মেধাবীরাই দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে পারে, কোটা প্রার্থীরা নয়।'
মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল শনিবার শহীদ মিনারের পাদদেশে এক সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে।
সিলেট : কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। পরে রোজাদার মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর সাড়ে ১২টায় ক্যাম্পাস থেকে মিছিলসহকারে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় সড়কের উভয় পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধ চলাকালে সতর্ক অবস্থায় ছিল পুলিশ।
আজাদুর রাহমান নামের এক আন্দোলনকারী বলেন, 'কোটা প্রথার কারণে প্রকৃত মেধাবীরা চাকরি থেকে পিছিয়ে পড়ছে অথচ স্বল্প মেধা নিয়েও অনেকে চাকরির সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। তাই আমরা সব ধরনের কোটা প্রথা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।'
রাজশাহী : এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে প্রায় দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। দাবি মানা না হলে আগামীকাল শনিবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল ১১টায় প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের স্লোগান দিতে থাকেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে প্রক্টর ড. তারিকুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন। তবে দাবি মানা না হলে শনিবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং রবিবার থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
রংপুর : শাহবাগের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধন করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে পার্ক মোড়ে মানববন্ধন করেন তাঁরা। এতে কয়েক শ শিক্ষার্থী 'কোটাকে না বলুন', 'চাকরির পরীক্ষায় সব ধরনের কোটা বাতিল করুন', 'কোটা বাতিল করে মেধাবীদের মূল্যায়ন করুন' ইত্যাদি বাক্য লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাতে হাত রেখে কোটার প্রতিবাদ জানান।
খুলনা : সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের হাদি চত্বরে মানববন্ধন করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারির পরীক্ষায় যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৭৮-৭৯ নম্বর পেয়েও উত্তীর্ণ হতে পারেননি, সেখানে বিভিন্ন কোটার শিক্ষার্থীরা মাত্র ৫৭-৫৮ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন, যা অমানবিক এবং মেধার চূড়ান্ত অবমূল্যায়ন। সরকারি সব চাকরির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার জোর দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।

No comments

Powered by Blogger.