দূষিত রক্তের বাণিজ্য- জীবন রক্ষায় প্রাণঘাতী আয়োজন!

অস্বীকার করা যাবে না, দেশেই এখন সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই যথেষ্ট উন্নত মানের চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে। হাতের কাছেই মিলছে আধুনিক প্রযুক্তি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ।
একই সঙ্গে সাধারণভাবে চিকিৎসার বাণিজ্যিকীকরণ, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসার স্বল্প সুযোগ, চিকিৎসক ও সেবিকাদের দায়িত্বশীলতা নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে। কিন্তু জীবন রক্ষার এই ব্যবস্থায় প্রাণঘাতী কী ভয়ঙ্কর অন্ধকার যে লুকিয়ে আছে, মঙ্গলবার মগবাজারে এক 'ব্লাড ব্যাংকে' অভিযানকালে খানিকটা বোঝা গেছে। দেখা গেছে, মাদকাসক্ত ও পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে রক্ত নিয়ে তারা চড়া দামে বিক্রি করছে। তৈরি করছে রক্ত পরীক্ষার ভুয়া কাগজপত্র। রক্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে না। টেলিভিশনের পর্দায় যারা রক্ত বিক্রেতা ওই প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ চিত্র দেখেছেন, তারা শিউরে উঠেছেন। জীবন রক্ষা দূরে থাক, এই রক্ত বরং সাধারণ রোগীকেও মুমূর্ষু করে তুলতে পারে। খতিয়ে দেখা উচিত, ওই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কোনো হাসপাতাল চুক্তিবদ্ধ রয়েছে কি-না। অনেক ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেট জড়িত থাকে। সেটা শনাক্ত করা গেলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমানো আরও সহজ হবে। ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযানের পর দুর্বল মামলা প্রক্রিয়ার কারণে অভিযুক্তদের খালাস পাওয়ার নজির আমাদের দেশে কম নেই। এর পুনরাবৃত্তি যেন আলোচ্য ক্ষেত্রে না হয়। আমরা মনে করি, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটিই প্রাণঘাতী বাণিজ্যের একমাত্র নজির নয়। রাজধানীতে অভিযান পরিচালনা করলে এমন আরও প্রাণঘাতী বাণিজ্যের হোতারা ধরা পড়বে। আমরা চাই, এ ধরনের অভিযান কর্তৃপক্ষ অব্যাহত রাখুক। তবে স্বাভাবিক রক্ত সংগ্রহ ও সরবরাহের বৈধ ব্যবসা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। নজর রাখতে হবে রাজধানীর বাইরেও। বিভাগ, জেলা, এমনকি অনেক উপজেলা শহরেও এখন গড়ে উঠেছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান। চিকিৎসাসেবা মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে যাওয়া প্রশংসনীয় উদ্যোগ; কিন্তু সেগুলোর মান নিশ্চিত করা উচিত সবার আগে। সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে কর্মরত গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। সর্বোপরি চাই জনসচেতনতা। সচেতন নাগরিকরাই উত্তম প্রহরী।

No comments

Powered by Blogger.