কেন্দ্রীয় নেতা ও এমপিদের নিয়ে বৈঠক-আগামী নির্বাচনে আমরাই জিতব : শেখ হাসিনা'ড. ইউনূস সেলফিশ, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন'

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরাই জিতব ইনশাআল্লাহ। আর সে জন্য এখনই সংগঠনের তৃণমূলে মান-অভিমান, দ্বন্দ্ব-কোন্দল আর অনৈক্য দূর করতে হবে।
ভেদাভেদ ভুলে যেতে হবে। চাঙ্গা করতে হবে তৃণমূলকে। অপপ্রচারের দেয়াল ভাঙতে হবে। কেননা আমরা উন্নয়ন করলেও দুর্নীতিবাজরা অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে ভোট পায়।'
গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে অনির্ধারিত বৈঠকে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এ সময় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র মতে, বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, 'গাজীপুরসহ অন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হলেও সংসদ নির্বাচনে আমরাই জিতব।' নিজের কাছে তৃণমূল থেকে সংগৃহীত তথ্য ও গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে বলে নেতাদের তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, তবে এর আগে সরকার ও দলের বিরুদ্ধে সৃষ্ট অপপ্রচারের দেয়াল ভাঙতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।
চলতি রমজান মাসে দলীয় নেতাসহ সব পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে শেখ হাসিনা বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। অন্য একটি সূত্র জানায়, সারা দেশে নারী ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে নির্বাচনের আগে ৪০ জন নারী সংসদ সদস্যকে দিয়ে একটি প্রতিনিধিদল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁরা সারা দেশে নারী ভোটারদের মধ্যে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাবেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পৃথক পৃথকভাবে গণভবনে যান। তবে সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, ইকবালুর রহিম, নাজমা আক্তার, অপু উকিল, নসরুল হামিদ- এঁদের নিয়ে শেখ হাসিনা একটি বৈঠক করেন। এ সময় তিনি তাঁদের কয়েকজনের কাছে নির্বাচনী এলাকার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান।
সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থী অপপ্রচারের কাছে হেরেছেন দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, 'পঁচাত্তরের পরও অপপ্রচারের কাছে আমরা হেরেছি। এখনো আবার সেই চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।' তিনি বলেন, 'গাজীপুরে অন্য সব প্রার্থীর চেয়ে আজমত উল্লা খান সৎ ও যোগ্য প্রার্থী। গুজব রটিয়ে তাঁকে পরাজিত করা হয়েছে। বিজয়ী হয়েছে দুর্নীতিবাজরা। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এ অপপ্রচারের দেয়াল ভাঙতে হবে। আমরা উন্নয়ন করলেও আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবাজরা অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে ভোট পায়।'
সূত্র জানায়, বৈঠকে উপস্থিত দলীয় সংসদ সদস্য তারানা হালিমও প্রচারের দিক থেকে আওয়ামী লীগ পিছিয়ে রয়েছে দাবি করে গাজীপুরে নির্বাচনী প্রচারণার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন। সেখানেও প্রচারে দুর্বলতার বিষয়টি তাঁর দৃষ্টিতে পড়েছে বলে যোগ করেন তারানা।
সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি ড. ইউনূসের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, 'সপ্তাহ দুই আগে তাঁর (ইউনূস) সঙ্গে আমার দেখা হয়। তাঁর কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাই। জবাবে ইউনূস বলেন, তোমার নেত্রী তো এক দিনও চায়ের দাওয়াত দিলেন না।' রনি বলেন, 'নেত্রীর সঙ্গে তো আপনার ভালো সম্পর্কই ছিল। সেটা আপনিই নষ্ট করেছেন। আপনি মামলা করেছেন, হেরেছেন।'
এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, "আজকে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে ড. ইউনূস এত কথা বলছেন। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৮ সালে আমিই টাকা দিই। তাঁকে সুযোগ করে দিই। আজ তিনি এগুলো বেমালুম ভুলে গেছেন। ড. ইউনূস একটা 'সেলফিশ'। তিনি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।"
শেখ হাসিনা বলেন, অপরাজনীতির সঙ্গে আপস করে রাজনীতি করিনি, করবও না। দেশের মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করি। আজীবন তা-ই করে যাব। আবারও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আর বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্র এক হয়েছে। সবাইকে এক হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এ সময় নারী সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার বলেন, সরকারের আশপাশে এখনো মোশতাক গং ঘোরাঘুরি করছে। প্রশাসনে জামায়াত-শিবির ঢুকে গেছে। ঐক্যবদ্ধভাবে তারা সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছে রংপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার খোঁজখবর নেন শেখ হাসিনা।
পাঁচ সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু
হওয়ায় অভিনন্দন
গাজীপুরসহ পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন 'সুষ্ঠুভাবে' অনুষ্ঠিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশন, জনগণ, রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যমসহ সবাইকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি এই অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশনে সুষ্ঠু নির্বাচনে গণতন্ত্র ও জনগণ বিজয়ী হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিরোধী দলের মিথ্যা প্রচার, ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং নির্বাচন বিতর্কিত করার সব অপচেষ্টা সত্ত্বেও বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার পর্যায়ে বিভিন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকদল সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে মর্মে সংবাদ ও তথ্য দিয়েছে।'
বিবৃতিতে বলা হয়, 'সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতি সম্মান রেখে সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি শুধরে গণতন্ত্র, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখতে আগামী দিনগুলোতে মহাজোট সরকার কাজ করবে।'

No comments

Powered by Blogger.