সিরিজ জয় by ইশতিয়াক পারভেজ ও সামন হোসেন

শাবাশ বাংলাদেশ সাবাশ। দারুণ লড়াইয়ে মাঠ মাতালো মুশফিক বাহিনী। ব্যাটে বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্যে জয় ছিনিয়ে নিলো বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজ জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট সিরিজ হারের জবাব দিলো বাংলাদেশ।
৫ ম্যাচ সিরিজ ৩-২ এ জিতলো মুশফিক বাহিনী। খুলনায় সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচে জয়ের পর ঢাকায় তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচে জয় নিয়ে সিরিজে সমতা ফেরায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গতকাল পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডেতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ৬ ওভার বাকি থাকতে বাংলাদেশ দুই উইকেটের জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে।

আন্দ্রে রাসেলের বলে চার মেরে জয় নিশ্চিত করেন নাসির হোসেন। তার আগের বলেই জয় নিশ্চিত হয়ে যেত। কিন্তু চার হয়ে গেছে ভেবে রান নিয়েই উল্লাস করতে থাকেন নাসির। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আপত্তির মুখে আবার খেলতে হয় বাংলাদেশকে। তবে পরের বলটিও একইভাবে মেরে মাঠের বাইরে পাঠান নাসির। ৫২ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকেন নাসির। বাংলাদেশের একমাত্র ছক্কাটিও আসে তার ব্যাট থেকে। অপর প্রান্তে ৪ বলে এক রানে অপরাজিত থাকেন ইলিয়াস সানি। তবে শেষের আগে খেলাটিকে কঠিন করে তুলেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। কেমার রোচ আবারও এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেন। প্রথমে সোহাগ গাজী ও পরে রাজ্জাক আউট হলে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে ঠাণ্ডা মাথার নাসির হোসেন তা আর স্থায়ী হতে দেননি। এশিয়া কাপের ফাইনালে হারের দুঃখ কিছুটা হলেও দূর হবে এ জয়ে। খেলায় অল রাউন্ডার নৈপুণ্যের জন্যে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আর সিরিজ সেরা নির্বাচিত হন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
আগে বাংলাদেশ প্রথম পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই সিরিজে বাংলাদেশ দল হোয়াটওয়াশ হয়। একই বছর বাংলাদেশ আরেকটি ৫ ম্যাচ সিরিজের ওয়ানডে খেলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। একে একে ১১টি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে পাঁচ ম্যাচের। আর এবারই প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে  ৬টি ওয়ানডে সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। একটি সিরিজে মাত্র জয় তুলে নিতে সক্ষম হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ এই পর্যন্ত ২০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে হেরেছে ১৪টিতে, জয়  পেয়েছে ৪টিতে আর ২টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।
২১৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। দলীয় ৮ রানে নামের পাশে ৮ রান যোগ করে আউট হন তামিম ইকবাল। টানা দ্বিতীয় বারের মতো তামিম রোচের বলে আউট হন। একই ওভারের শেষ বলে এই সিরিজে সেঞ্চুরি হাঁকানো আনামুল হক বিজয়ও বিদায় নেন। ধাক্কাটা এখানেই শেষ নয়। নাঈম ইসলামের ব্যর্থতা ঢাকতে একাদশে সুযোগ করে নেয়া জহুরুলও ব্যর্থ হলেন। কেমার রোচের তৃতীয় শিকার জহুরুল কিপার থমাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন। রব উঠতে থাকে সব শেষ, সব শেষ বলে। তখনই অনেক দর্শককে মাঠ ছেড়ে যেতে দেখা যায়। স্কোর বোর্ডে তখন ৩ উইকেট হারিয়ে ৩০ রান যেন সিরিজ জয়ের স্বপ্নকে উপহাস করছিল। এবার সিরিজ বাঁচাতে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। তবে আগের দিন দলের বিপর্যয়ে মাহমুদুল্লাহর প্রমোশন হয় ব্যাটিং অর্ডারে। ৭ নাম্বার থেকে গতকাল তাকে পাঠানো হয় ৫ নাম্বারে। দু’জন ধীরে ধীরে আবারও সিরিজ জয়ের স্বপ্নে রং ঢালতে শুরু করেন। চতুর্থ উইকেটে গড়ে তোলেন ৯১ রানের জুটি। সেই সময় বাংলাদেশের খেলা দেখতে মাঠে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাধারণ দর্শকদের মতোই করতালি দিয়ে উৎসাহ দিতে থাকেন তিনি। দলীয় ১২১ রানের সময় বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের স্বপ্নে আবারও ধাক্কা লাগে। আর সেই স্বপ্নে ধাক্কা দেন সুনীল নারিন ৪৫ রান করা মাহমুদুল্লাহকে ৪৫ রানে বোল্ড করে। ৭ টি চারে ৪৩ বলে ৪৫ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। তবে তখনও দলের আশার আলো হয়ে ক্রিজে ছিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। কিন্ত ভাগ্য বিধাতা যেন অন্য কিছুই লিখে রেখেছিলেন। নাসিরকে নিয়ে স্কোর বোর্ডে মাত্র ১০ রান যোগ করতেই আবারও হুমকির মুখে পড়ে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন। সহ অধিনায়কের বিদায়ের পর দুর্ভাগ্যের শিকার হলেন নারিনের বলে। বলটি তার ব্যাট স্পর্শ করে স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। হতাশা জেঁকে বসে সবার মধ্যে।
এরপর বাংলাদেশ দলের খেলার চেয়েও বড় স্বপ্ন যার সেই মমিনুল যেন দলের কাণ্ডারি হয়ে উঠেন। নাসির হোসেনের সঙ্গে ৫৩ রানের জুটি গড়ে আবারও সিরিজ জয়ের স্বপ্নকে জাগিয়ে তোলেন। কিন্তু যখন এই দুজনের ব্যাটেই সিরিজ জয়ের স্বপ্নের বাস্তব রূপ দেখছিলেন তখনই আউট হলেন মমিনুল। তবে আউট হওয়ার আগে ৩টি চারে ৫০ বলে ২৫ রান করেন মমিনুল। আর তখনও দলের আশার আলো হয়ে তখনও ক্রিজে ১টি ছয়ের মারে ৪১ বলে ২৫  রান করা নাসির  হোসেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল নিজেদের ৫০তম সিরিজ খেলেছে। ১৯৯৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৩টি সিরিজে জয়  পেয়েছে। বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয় করে ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।


প্রতিবেদকঃ ইশতিয়াক পারভেজ ও সামন হোসেন

No comments

Powered by Blogger.