কৌশলে অবরোধ-ইস্যু বদলে দিচ্ছে জামায়াত by মাহমুদ মেনন ও জাকারিয়া মন্ডল

আঠারো দলের রাজপথ অবরোধ কর্মসূচিতে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক নেতাদের মুক্তির দাবি ঢোকাচ্ছে জামায়াত। গত ২৮ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘোষণা করা ৯ ডিসেম্বরের রাজপথ অবরোধ কর্মসূচিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালই প্রধান এজেন্ডা। এমনকি দাবি তালিকাতেও যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির কোন ব্যাপার নেই।
কিন্তু ১৮ দলীয় জোটে বিএনপির প্রধান শরিক জামায়াত এ এজেন্ডাই ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে তারা। সরাসরি কেন্দ্র থেকে না হলেও বিভিন্ন মহানগর, জেলা ও থানা ইউনিট থেকে নেতা-কর্মীদের এ বিষয়ে ‘ছবক’ দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে বিবৃতি বা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও।

শনিবার রাতে এমনই একটি বিবৃতিতে এসেছে বাংলানিউজের মেইলেও। মেইলটিতে আরো অনেক রাজনৈতিক বক্তব্যের সঙ্গে এও বলা হয়েছে, “কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রহসন বন্ধ করে আটককৃত শীর্ষ নেতাসহ সব বন্দির মুক্তির দাবিতে” রোববারের অবরোধ সফল করুন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮ দলের রাজপথ অবরোধ কর্মসূচিতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক নেতাদের মুক্তির দাবিই হবে জামায়াতের মূল ইস্যূ। এ দাবিতে শ্লোগানে শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করবে তারা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটক নেতাদের নাম ও ছবি সম্বলিত ব্যানার-প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুনে তুলবে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মুক্তির দাবি।

বিষয়টিকে ‘স্টিলিং দ্য শো’ হিসেবেই মনে করছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, কোনো একটি আয়োজনের মূল আকর্ষণ যখন প্রত্যাশিত বা অপ্রত্যাশিত কোনো ব্যক্তির বা গ্রুপের হাতে চলে যায় তখন আয়োজকদের আর কিছুই করার থাকে না। ইদানিং বিএনপি’র কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবির ঠিক সেই কাজটিই করছে। রোববারও এর ধারবাহিকতা বজায় থাকবে।

তারা এও বলছেন, ১৮ দলের রাজপথ অবরোধের কর্মসূচির স্টিয়ারিং হুইল চলে যাবে জামায়াত ও তাদের ছাত্র সংগঠন শিবিরের দখলে। এমনকি তারা গায়ে পড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে তার দায় বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের ওপর চাপিয়ে ফায়দা লুটতে চাইবে।

এভাবে ফায়দা তোলার নীল-নকশাও নাকি এঁকেছে জামায়াত-শিবিরের নেতারা। সেই নকশা অনুযায়ীই রোববার মাঠ দাপাবে তারা। বস্তুত রাজপথ অবরোধ কর্মসূচির ফোকাল পয়েন্টই পাল্টে দিতে চাচ্ছে জামায়াত-শিবির।

কৌশলে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ ও শীর্ষ নেতাদের মুক্তি ছাড়াও জামায়াত নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদকেও অঅবরোধের ইস্যু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে তারা। 

শনিবার রাতে রাজশাহী থেকে দেওয়া বিবৃতিতেও এমনই আভাস দেওয়া হয়েছে। ওই বিবৃতিতে রাজশাহী মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আতাউর রহমান এবং ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ডা. মুহাম্মাদ জাহাঙ্গীর বলেন, “আমরা দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ  অবরোধ কর্মসূচি পালনের জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই। অথচ সরকার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগকে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করার আহবান জানিয়ে যে উসকানিমুলক বক্তব্য দিয়েছেন তা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শামিল।”

বিবৃতিতে তারা বলেন, “এই উস্কানিমুলক বক্তব্যের কারণে দেশব্যাপী নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির দায় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকেই বহন করতে হবে। দায়িত্ববান মন্ত্রীর  কাছে থেকে এ ধরনের উস্কানিমুলক বক্তব্য জাতি আশা করতে পারে না।”

“একদিনের অবরোধ কর্মসূচিতে যদি সরকারের শূভবুদ্ধির উদয় না হয় এবং কোথাও বাধা দেওয়া হয় তাহলে আমরা লাগাতার হরতাল কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো” বলেও সরকারকে হুঁসিয়ার করা হয় বিবৃতিতে।

এছাড়া বিবৃতিটিতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি তোলার পাশাপাশি কৌশলে সাবেক আমির গোলাম আজম, বর্তমান আমির মতিউর  রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম জুড়ে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাও প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। 
জামায়াত-শিবিরের এমন কৌশলে কাজ হলে রোববার ১৮ দলীয় জোটের রাজপথ অবরোধ কর্মসূচির মূল ফোকাসিং হবে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দাবি। আর সংঘর্ষের দায় চাপবে জোট নেতা বিএনপির ওপর।

No comments

Powered by Blogger.