রাজপথের কর্মসূচি-হরতাল-অবরোধে জনদুর্ভোগ

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন দাবিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তার মিত্র দলগুলো আজ রোববার রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।
তারা প্রথমে ৮ ঘণ্টার জন্য সড়কপথ অবরোধের কথা বললেও পরে রাস্তায় বাস-ট্রাক-রিকশা বের না করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এভাবে আজ কার্যত অবরোধের নামে আরেকটি জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী হরতালই দেওয়া হলো। এটা জানা যে, হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আহ্বানে অবরোধ কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পন্থা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হওয়াই স্বাভাবিক। বিরোধী দলের নেতারা একদিকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের কথা বলেছেন, অন্যদিকে তাদের অবরোধ কর্মসূচিতে বাধাদান বা বানচালের চেষ্টা করা হলে লাগাতার হরতালসহ কঠোর কর্মসূচির আগাম ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন। বিরোধী দল দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনের কর্মসূচি দিতেই পারে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই নিয়মতান্ত্রিকতার পথ ছেড়ে জ্বালাও-পোড়াও নীতি অনুসরণ সমর্থনযোগ্য নয়। অথচ ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম সদস্য জামায়াতে ইসলামী কয়েক মাস ধরে রাজপথে একের পর এক হিংসাশ্রয়ী কর্মসূচি গ্রহণ করে চলেছে। তারা গাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে এবং পুলিশ-বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। বিরোধী দলকে তাদের বিরোধিতার স্বীকৃত উপায় জাতীয় সংসদকে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহারেও সচেষ্ট হতে হবে। দীর্ঘ বয়কটের পর বিএনপি সংসদে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং দেশবাসী এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। তাদের অনেক দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে এবং সরকারকে অবশ্যই তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এসব ইস্যুতে তারা জনগণের সমর্থন প্রত্যাশা করছে। কিন্তু জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচি দিয়ে কীভাবে জনসমর্থন মিলবে, সেটা বোধগম্য নয়। বিরোধী দলের আন্দোলন এবং তা মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ যাতে জনসাধারণের জীবনযাত্রা ও উন্নয়ন কর্মসূচিকে ব্যাহত না করে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। দেশে আজ যে অস্থিরতা তার মূলে সহিষ্ণু রাজনৈতিক সংস্কৃতির অনুপস্থিতি। বিরোধী দলের আজকের অবরোধ কর্মসূচি নাগরিক জীবনে স্থিতিহীনতা ও অশান্তির কারণ হবে, তাতে সন্দেহ নেই। বিরোধী দলের নেতারা জানেন যে, হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ থাকে না। তারা এ-ও জানেন, হুমকি প্রদান বা কঠোর কর্মসূচিতে সরকারের পতন হয় না এবং দেশ ও জনগণেরও কোনো উপকার হয় না। গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। এতে অস্থিতিশীলতার শক্তি মাথা তোলার আস্কারা পায়। অর্থাৎ দেশ, মানুষ এবং গণতন্ত্র_ কোনোটির জন্যই এ ধরনের অস্থিতিশীলতাকে আহ্বান জানানোর মতো কর্মসূচি কল্যাণকর নয়। তাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অঙ্গ প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলের অবরোধের নামে গায়ের জোরে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করতে যাওয়া উচিত নয়। আমরা সরকার ও বিরোধী দল উভয় পক্ষকেই সংসদীয় রাজনীতির স্বীকৃত পন্থায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করার আহ্বান জানাই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবশ্যই সহিংসতার প্রশ্নে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। তবে যে কোনো উস্কানির মুখে তারা যেন সংযত থাকে, সেটা প্রত্যাশিত। সংঘাতে নয়, সমঝোতার পথেই যে রাজনৈতিক বিরোধের নিষ্পত্তি সম্ভব_ এই সত্য সব পক্ষকে উপলব্ধি করতেই হবে।

No comments

Powered by Blogger.