অবরোধে ভাঙচুর, আগুন, সংঘর্ষ

অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে ঢাকার অদূরে সাভার ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ গাজীপুরের টঙ্গীতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা।
কেরানীগঞ্জ: সকাল সাড়ে সাতটার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলী গোলচত্বর এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ শুরু করেন। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়ায় বিএনপির সাত থেকে আটজন নেতা-কর্মী আহত হন। পরে একজনকে আটক করে পুলিশ।
সকাল সোয়া আটটার দিকে পুরান ঢাকার নয়াবাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন অবরোধকারীরা। সকাল নয়টার দিকে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা ইউনিটের সভাপতি সানাউল্লাহ মিয়ার নেতৃত্বে আদালত এলাকায় মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও রাম দা নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে চারজন আইনজীবী গুরুতর আহত হন। তাঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সকাল সোয়া নয়টার দিকে কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রুবেল নামে ছাত্রদলের এক কর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন।
পুরান ঢাকা এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া পুরান ঢাকা এলাকায় দফায় দফায় মিছিল করছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত নেতা-কর্মীরা।
সকাল থেকে রাজধানীর সঙ্গে কেরানীগঞ্জ, দোহার, নবাবগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল ও খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বুড়িগঙ্গা প্রথম ও দ্বিতীয় সেতুতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
লালবাগ জোনের ডিসি হারুনুর রশিদ প্রথম আলো ডটকমকে জানান, সড়কে যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি ও অরাজকতার অভিযোগে ১৪-১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।

সাভার: সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পিকেটিং করেছেন বিএনপি, ছাত্রদল ও জামায়াতের কর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা সংঘর্ষে পুলিশ ও বিএনপি, ছাত্রদল ও জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সকাল থেকেই অবস্থান করেন বিএনপির ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। ওই সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ ভোর পাঁচটার দিকে সাভারের জোড়পুল এলাকায় বিএনপির ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা প্রথমে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন এবং পরে একটি সিএনজি পাম্পে ঢুকে ২০টির মতো যানবাহন ভাঙচুর করেন। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পিকেটাররা সাভারের মধুমতী টাইলসের সামনে একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন।
ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে আশুলিয়ার নয়ারহাট এলাকায় বিএনপি, ছাত্রদল ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সকাল আটটা পর্যন্ত চলা প্রায় দেড় ঘণ্টার সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশ সদস্য এবং বেশ কিছু নেতা-কর্মী আহত হন। পরে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে আট থেকে ১০টি যানবাহন ভাঙচুর করেন।
সকাল সাতটার দিকে বিএনপির নেতা আমানউল্লাহ আমানের নেতৃত্বে সাভারের আমিনবাজার এলাকা অবরোধ করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এক ঘণ্টা ধরে চলা ওই সংঘর্ষে একটি ব্যক্তিগত গাড়িসহ তিনটি গাড়িতে আগুন ও অর্ধশত গাড়ি ভাঙচুর করেন বিএনপি, জামায়াত ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
আমিনবাজার এলাকায় বিক্ষোভ করেন বিএনপি, জামায়াত ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তবে পুলিশ ও র্যাবের উপস্থিতিতেই তাঁরা গাড়ি ভাঙচুর ও টায়ারে আগুন দিলেও নীরব ভূমিকা পালন করে পুলিশ।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে সিটি করপোরেশনের ময়লা বহনকারী তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করেন অবরোধকারীরা। পুলিশ তাঁদের ধাওয়া করে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আমিনবাজারে রাস্তার ওপর সমাবেশ চলাকালে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন গুরুতর আহত হন। তাঁকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর পর থেকে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অবরোধকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) আসাদুজ্জামান ও আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

টঙ্গী: গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা টঙ্গী থানা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। এ সময় বিএনপির কমপক্ষে ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। চেরাগ আলী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির কর্মীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে।
এর আগে টঙ্গীর কলেজগেট এলাকায় ১৮ দলীয় জোটের কর্মীরা মহাসড়কে যানবাহনে ভাঙচুর ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে।
টঙ্গী মডেল থানার ওসি মো. ইসমাইল হোসেন জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার; কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) ও টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি)

No comments

Powered by Blogger.