'হামার আফরিন আসিবে....' by তৌফিক মারুফ

আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত পানিতে সয়লাব অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুপুরীতে রূপ নেওয়া তাজরীন গার্মেন্ট কারখানার ভেতর-বাইরের পুরো এলাকা। রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় কাদাপানিতে একাকার হয়ে তাজরীনের প্রধান ফটকের সামনে একটি আমগাছের নিচে বসে পোড়া ভবনটির দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন ওই কারখানারই কর্মী রায়হান।
তাঁকে দুই পাশ দিয়ে ধরে বসে আছেন আরো দু-তিনজন। দুই লোক সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠেন রায়হান, 'ওই বেটারা, আগতদি সরি যান, হামার আফরিন আসিবে...।' বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি।
রায়হানের সহকর্মী রফিকুল জানান, খরাপ্রবণ রংপুরের মিঠাপুকুর সদরে বাড়ি আফরিনদের; তাঁর পড়াশোনার ইচ্ছা ছিল অনেক। দিনমজুর বাবা খরচ চালাতে না পারায় বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই পড়াশোনা ছাড়িয়ে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। স্বাধীনচেতা আফরিন সে দফায় বিয়ে করেননি। বাবা-মাকে বুঝিয়েশুনিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য প্রতিবেশী যুবক রায়হানের সহায়তায় ঢাকায় এসে চাকরি নেন আশুলিয়ার তাজরীন গার্মেন্ট কারখানায়। এ সূত্রে একসময় নাসা গার্মেন্টের কর্মী রায়হানের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় তাঁর। পরে রায়হানও চাকরি নেন আফরিনের কর্মস্থলে। দুই পরিবারের সম্মতিতে গত কোরবানির ঈদের পরের দিন গ্রামের বাড়িতে বিয়ে হয় আফরিন ও রায়হানের। ঈদ আর বিয়ের ছুটি কাটিয়ে মাত্র কয়েক দিন আগে ঢাকায় ফিরে আসেন তাঁরা। যোগ দেন কর্মস্থলে।
রফিকুল জানান, শনিবার আগুন লাগার পর দোতলা থেকে রায়হান বের হয়ে আসতে পারলেও আফরিন আসতে পারেননি। বহুভাবে চেষ্টা করেও অনেকের মতো আফরিনকেও উদ্ধার করা যায়নি। এই শোকে রবিবার সকাল থেকে কারখানার ফটকের সামনে অপেক্ষা করছিলেন আর একটু পর পর জ্ঞান হারাচ্ছিলেন রায়হান।

No comments

Powered by Blogger.