সবিশেষ-রাজমিস্ত্রি বাঁচালেন বহু প্রাণ by তায়েফুর রহমান

অগ্নিকাণ্ডের শিকার তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড এলাকার পাশের ভবনটিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন উকিল মণ্ডল। আগুনের খবর শুনে তিনি ছুটে যান কারখানার সামনে। দেখতে পান আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়া। তাঁর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন ওই কারখানার পঞ্চম তলায় অপারেটর হিসেবে কাজ করেন।
স্ত্রীকে উদ্ধারের আশায় তিনি কারখানার পাশের দোতলা ভবনের ছাদে উঠে যান। বাইরে থেকেই কারখানার এগজস্ট ফ্যান ভেঙে অন্তত ২০০ শ্রমিককে বের করে আনেন। একপর্যায়ে ওই জায়গা থেকে নামার সময় দু-তিনজন শ্রমিক নিচে পড়ে যান। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। নিচে গিয়ে জানতে পারেন তাঁর স্ত্রী পাঁচতলা থেকে লাফ দিয়ে দুই পা ভেঙে ফেলেছেন। দ্রুত তাঁকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান তিনি।
চারজনের সন্ধান নেই : বড় ভাই নয়ন, ভাবি মনি বেগম, মামা নজরুল ইসলাম ও মামি আমেনা খাতুনকে খুঁজতে রংপুরের মিঠাপুকুর থানার নিলুফার বেগম রবিবার দুপুরে গিয়েছিলেন নিশ্চিন্তপুর প্রাইমারি স্কুলমাঠে। ওই মাঠে সারি সারি মরদেহ দেখে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন নিলুফার বেগম। স্বজনরা জানান, নিখোঁজ চারজনই কারখানার তৃতীয় তলায় কাজ করতেন।
এ ছাড়া নিখোঁজ হেনাকে না পেয়ে রবিবার দুপুরে স্কুলমাঠে অঝোর ধারায় কান্না করছিলেন তাঁর মা রোকেয়া বেগম। হেনা কারখানার চতুর্থ তলায় কাজ করতেন। তৃতীয় তলায় কাজ করতেন মাজেদা বেগম নামে এক নারী শ্রমিক। তাঁর খোঁজে এসে কান্না করছেন স্বামী জাবেদ আলী। একই কারখানার মুক্তাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না চাচা আনোয়ারুল ইসলাম।
প্রেম করে গত কোরবানির ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে খালাতো ভাই সুজনকে বিয়ে করেন আফরিন আক্তার। আফরিন সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন তৃতীয় তলায়। আফরিনের কোনো সন্ধান পাচ্ছিলেন না তাঁর উকিল বাবা একই কারখানার মেকানিক আলমগীর হোসেন।
বেতন বকেয়া ছিল : আলমগীর হোসেন নামের একজন মেকানিক তৃতীয় তলায় কাজ করতেন। তিনি জানান, তাঁদের দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তাঁরা বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করলে কারখানার পরিচালক শাজাহান মিয়া তাঁদের ডেকে নিয়ে রবিবার বেতন পরিশোধ করা হবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু রবিবার আসার আগেই শনিবার এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। আলমগীর জানান, শনিবার কারখানায় আগুন লাগার সময় তিনি ছিলেন তৃতীয় তলায়। বের হওয়ার কোনো উপায় না পেয়ে এগজস্ট ফ্যান ভেঙে সেখান থেকে লাফিয়ে পড়েন পাশের টিনের চালার ওপর। তিনি সামান্য আহত হয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.