সংসদে শোক প্রস্তাব-প্রধানমন্ত্রী বললেন গার্মেন্টে আগুন পরিকল্পিত

আশুলিয়ায় গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত বলে আখ্যায়িত করেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ওই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে বলেছেন, 'মানুষের জীবন নিয়ে এই খেলা কবে বন্ধ হবে জানি না! তবে ঘটনার জন্য দায়ীদের দ্রুতই চিহ্নিত করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।'
গতকাল সোমবার রাতে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। স্পিকারের আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী তাজরীন গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করেন। এরপর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এ বিষয়ে আলোচনা উত্থাপন করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এরপর আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন, ইঞ্জিনিয়ার শাহরিয়ার আলম এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, 'এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনার সময় উদ্ধার কাজে নিয়োজিতদের কাজে বাধা না দিয়ে বরং সহযোগিতা করুন। এ ধরনের ঘটনার পরপরই এক শ্রেণীর লোক ও শ্রমিক নেতা আছে যারা উসকানি ও ইন্ধন দিয়ে উদ্ধারকাজে নিয়োজিতদের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালায়। যারা এসব করে তাদের একটি স্বার্থ থাকে। তাই গার্মেন্ট মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানাই, এ ঘটনার পর যারা উসকানি দেয়, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালায় তাদের শনাক্ত করে আইনের হাতে সোপর্দ করুন।'
ডেবোনিয়ার নামে আশুলিয়ার আরেকটি গার্মেন্টে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সুমী খানের স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সুমী বেগম ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই গার্মেন্টশিল্পে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার আগুন লাগানোর ঘটনা অন্য এক শ্রমিক দেখে ফেলে। সিসিটিভি ক্যামেরায় সব কিছু দেখা গেছে। আমি নিজে সিসিটিভিতে ধারণ করা চিত্র দেখেছি। যারা আগুন লাগিয়েছে তারা ধরা পড়েছে, যে টাকা দিয়েছে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন এর নেপথ্যে কারা রয়েছে তদন্তের মাধ্যমে তাদেরও খুঁজে বের করা হবে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সুমী ও জাকির ধরা পড়ায় এটা পরিষ্কার, গার্মেন্টে আগুনের ঘটনা নিছকই 'দুর্ঘটনা' নয়, এটি পরিকল্পিতভাবেই ঘটানো হয়েছে।" প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, যে কারখানা আপনাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে, আপনারা বেতন-ভাতা নিয়ে জীবন ধারণ করেন, সেই কারখানায় আত্মঘাতী ঘটনা ঘটিয়ে আপনাদের কী লাভ? যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা তো ধরা পড়েছে। কিন্তু এত মানুষের জীবন গেল এর জবাব কে দেবে? পরবর্তী সময়ে আর কোনো জায়গায় যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে তিনি দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
আলোচনার সূত্রপাত করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আশুলিয়ায় ভয়াল অগ্নিকাণ্ড এবং বহদ্দারহাটে গার্ডার ধসে পড়ে শত শত মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় গোটা জাতি আজ হতবাক, শোকাহত। এ যেন মৃত্যুর মিছিল। তবে এ ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। আগের ঘটনাগুলোয় গার্মেন্ট মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই এই মৃত্যুর মিছিল থামছে না। তাই সংসদে শুধু শোক প্রস্তাব নিলেই হবে না, নিহতদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে শ্রমমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সিনিয়র সদস্য তোফায়েল আহমেদ আশুলিয়া ও চট্টগ্রামে বহদ্দারহাটের দুর্ঘটনায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, একজন শ্রমিক ২০ হাজার টাকার জন্য একটি গার্মেন্টে আগুন দেবে- এটা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, এই ভয়াল ঘটনা তখনই ঘটল, যখন সারা দেশে জামায়াত-শিবির তাণ্ডব চালাচ্ছে। এই ঘটনাতেও জামায়াত-শিবির জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। কারা এবং কী কারণে ঘটিয়েছে, তা অবশ্যই বের করতে হবে। সরকারকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি বলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। আরো নাশকতা চালাতে পারে। তাই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, এ ধরনের ঘটনাগুলো কারা ঘটাচ্ছে, পেছনে কে আছে এবং কে উসকানি দিচ্ছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে তা খুঁজে বের করা উচিত।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমীন বলেন, স্বাধীনতার পর দেখতাম শুধু পাটের দোকানে আগুন লাগছে। এখন দেখছি গার্মেন্টশিল্পে আগুন লাগছে। এটা কিসের আলামত? যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের সময় যখন ঘনিয়ে আসছে, তখন এ ধরনের নাশকতামূলক ঘটনা ঘটছে। কিছু মানুষ গার্মেন্টশিল্পে উসকানি দিচ্ছে, এদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, নিম্নমানের কাজের জন্যই বারবার গার্ডারগুলো ভেঙে পড়ছে। শুধু শোক প্রস্তাব পাঠ করলে চলবে না, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা না করলে মৃত্যুর মিছিল থামবে না।

No comments

Powered by Blogger.