হাড় দাঁত থেকে ডিএনএ সংগ্রহ

আশুলিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি তাজরীন ফ্যাশনসে দগ্ধ হয়ে নিহত অজ্ঞাতপরিচয় মানুষগুলোর পরিচয় উদ্ধারে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা নিতে হয়েছে কেবল দাঁত বা হাড় থেকে। আগুনে দেহগুলো পুড়ে অবশিষ্ট বলতে এগুলোই কেবল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
তা ছাড়া এসব নমুনা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ পরীক্ষার পর তা যাচাইসাপেক্ষে নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে বেশ লম্বা সময় লাগবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা ভস্মীভূত দেহগুলো থেকে গতকাল সোমবার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দুপুর থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত ওই নমুনা সংগ্রহ শেষে লাশগুলো আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ মরদেহের নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রেই বেগ পেতে হয়েছে বলে জানান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির গবেষকরা।
ল্যাবেরটরির বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কোনো কোনো দেহ এতটাই পুড়ে গেছে যে, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পাওয়াটাও মুশকিল হয়ে পড়তে পারে। তবে নমুনা স্ক্রিনিংয়ের পর তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ছাড়া বাকি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নমুনা হিসেবে নেওয়া গেছে দাঁত বা হাড়ের অংশবিশেষ। তিনি বলেন, সাধারণত বেশি পুড়ে যাওয়া দেহে চুল, নখ বা শরীরের অন্যান্য উপযোগী নমুনা পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে দাঁত ও হাড়ের অংশবিশেষই ভরসা। তাও নির্ভর করে এসব নমুনা কতটা পুড়েছে তার ওপর।'
মৃতদেহগুলোর পরিচয় শনাক্ত করতে কত সময় লাগতে পারে- এ বিষয়ে ড. শরীফ আখতারুজ্জামান বলেন, পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যাবে। কারণ এসব মৃতদেহের সম্ভাব্য দাবিদার স্বজনরা এলে তাঁদের দেহ থেকেও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হবে। পরে দুই নমুনা মিলিয়ে পরীক্ষা করা হবে। আবার ৫৯টি দেহের কোনোটির স্বজনই এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় স্বজনহারা পরিবারগুলো দাবি নিয়ে এলে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো পরীক্ষা করা হবে। এরপর শুরু হবে মিলিয়ে দেখার কাজ।
ল্যাবরেটরি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আরো কয়েকটি ডিএনএ ল্যাবরেটরি থাকলেও ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি এটিই একমাত্র। এখানে মামলা বা অপরাধসংক্রান্ত পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে। অন্যগুলোতে মেডিক্যালবিষয়ক অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। তবে এই ল্যাবরেটরি এ ধরনের পরীক্ষার জন্য এখন পুরোপুরি উপযুক্ত।
এদিকে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর সাংবাদিকদের জানান, রবিবার রাত পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে মোট ৬০টি অজ্ঞাতনামা লাশ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রবিবার রাতেই মুন্নী নামে এক শ্রমিকের লাশ স্বজনরা শনাক্ত করে নিয়ে গেছেন। ফলে বাকি লাশগুলো ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে, স্বজনহারা মানুষগুলো যেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতাল মর্গে এসে লাশ শনাক্ত করার চেষ্টা করেন। একইসঙ্গে ডিএনএ টেস্টের কাজেও যেন তাঁরা স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন।

No comments

Powered by Blogger.