চাঁদ উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র!

ঘটনাটিকে কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর আখ্যান বলে মনে হতে পারে। অথচ তা-ই ঘটতে চলেছিল। পরমাণু বোমা মেরে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদকে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৫০-এর দশকে এ ব্যাপারে পরিকল্পনা চূড়ান্তও করে ফেলেছিল তারা।
শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর মানুষের সম্ভাব্য বিপদের কথা বিবেচনা করে পরিকল্পনাটি বাতিল করা হয়। বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে ব্রিটেনের ডেইলি মেইল এ কথা জানিয়েছে।
দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে তখন স্নায়ুযুদ্ধ চরমে। উভয় পক্ষই মহাকাশ জয়ের অভিযানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। এমনই সময় ১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র পরিকল্পনা করে, পরমাণু বোমা মেরে চাঁদকে উড়িয়ে দেবে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নকে বুঝিয়ে দেওয়া যে, তারাই পেশিশক্তিতে শ্রেষ্ঠ।
গোপন ওই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়, 'অ্যা স্টাডি অব লুনার রিসার্চ ফাইটস', ডাকনাম ছিল 'প্রজেক্ট এ১১৯'। সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে প্রথম উপগ্রহ স্পুৎনিক পাঠানোর পর যুক্তরাষ্ট্র প্রকল্পটি হাতে নেয়। এই প্রকল্পে কাজ করেন সে সময়ের তরুণ জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সাগান। তিনিই হিসাব করে বের করেন, চাঁদে বিস্ফোরণ ঘটলে কী পরিমাণ ধুলা ও গ্যাসের সৃষ্টি হবে মহাকাশে।
২০০০ সালে বার্তা সংস্থা এপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পদার্থবিদ লিওনার্ড রেইফেল জানান, যুক্তরাষ্ট্র ভেবেছিল, পরমাণু বোমার আঘাতে পৃথিবী থেকে চাঁদের জ্বলে যাওয়া দেখে রাশিয়া নিশ্চয়ই ভয় পাবে। সাবেক আর্মার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের তদন্ত বিভাগের পরিচালক ছিলেন রেইফেল। ফাউন্ডেশনটি ইলিনয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধীনে। পরে তিনি নাসার উপপরিচালক হিসেবেও কাজ করেন।
সাগান ১৯৯৬ সালে মারা যান। তাঁর জীবনীকারদের একজন জানান, ১৯৫৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলোশিপের এক আবেদনে সাগান ওই প্রকল্পের উল্লেখ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ছোট একটি পরমাণু বোমা নিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর কথা ছিল চাঁদে। দুই লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মাইল দূরত্ব পাড়ি দিয়ে এটি চাঁদের মাটিতে আঘাত করে নিজে নিজেই বিস্ফোরিত হওয়ার কথা ছিল। বিজ্ঞানীরা বিকল্প হিসেবে হাইড্রোজেন বোমার কথা ভাবলেও সেটি ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য বেশ ওজনদার হতে পারে ভেবে পরমাণু বোমা পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করেন।
রেইফেল জানান, ওই প্রকল্প ১৯৫৯ সালের আগেই বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি বেশি দূর এগোতে পারেনি। বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা পৃথিবীর মানুষের ভবিষ্যৎ বিপদের কথা বিবেচনা করে প্রকল্পটি বাতিল করেন। তা ছাড়া বিজ্ঞানীরাও চাঁদের বাতাস দূষণের কথা ভেবে শঙ্কিত ছিলেন এ ব্যাপারে।

No comments

Powered by Blogger.