'মাগো বাঁচাও, দেরি হলে হয়তো আর...'

'মা, পারলে আমাকে বাঁচাও, আমি পাঁচতলার বাথরুমে আছি। দেরি হলে হয়তো আর দেখা হবে না। আর যদি মারা যাই তাহলে কোমরে বাঁধা শার্ট দেখে আমাকে চিনতে পারবা।' মারা যাওয়ার আগে এভাবেই শেষবারের মতো মোবাইল ফোনে মায়ের কাছে আকুতি জানিয়েছিলেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার লতিফপুর বড়বাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে পলাশ।
আশুলিয়ায় তাজরীন গার্মেন্টে কাজ করতেন এই তরুণ। শনিবার আগুন লেগে শতাধিক শ্রমিক প্রাণ হারান, যাঁদের মধ্যে ছিলেন পলাশ। তাঁর মা গোলাপী বেগম কাজ করেন পাশেই অন্য একটি পোশাক কারখানায়।
আগুন লাগার পর দোতলা আর তিন তলায় আগুনের ভয়াবহতা বুঝতে পেরে বাঁচার জন্য পঞ্চমতলার বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন পলাশ। আগুনে ঝলসে যাওয়া থেকে রেহাই পেলেও ধোয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
গতকাল সোমবার পলাশের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সন্তান হারিয়ে বিলাপ করছেন মা-বাবা। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন একমাত্র বোনটিও। বাবা-মা আর বোনকে নিয়ে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরেই থাকতেন পলাশ। বাবা রফিকুল ইসলাম অসুস্থতার কারণে অচল হওয়ায় আট মাস আগে সংসারের হাল ধরতে তাজরীন গার্মেন্টে চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। মা গোলাপী বেগমও চাকরি শুরু করেন।
রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন সকালে তাঁর কাছ থেকে ২০ টাকা চেয়ে নিয়েছিলেন পলাশ। ওই টাকা পকেটে নিয়েই কাজে যান তিনি। এটাই যে ছেলের সঙ্গে শেষ কথা সেটা ভাবতে পারেননি তিনি। পলাশের শার্টের পকেটে ওই ২০ টাকা অক্ষতই পেয়েছিলেন। কিন্তু ছেলেকে হারিয়েছেন চিরদিনের জন্য। একমাত্র কর্মক্ষম ছেলেকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় রফিকুল ইসলাম। একই অবস্থা মা গোলাপী বেগমের। তাঁর বিলাপে লতিফপুরের বাড়িতে জড়ো হওয়া মানুষ অঝরে কেঁদেছেন। ছেলের কোমরে বাধা শার্ট, বাসার চাবি আর পকেটে থাকা দুটি ১০ টাকার নোট নিয়ে বুকফাটা আর্তনাদ করছিলেন গোলাপী। বারবার শুধু বলছিলেন, 'ছেলে বাঁচবার চাইলেও কিছুই করতে পারিনি। পরে ছেলের কথামতো কোমরে শার্ট বাঁধা দেখে তাকে চিনতে পারি।'
লতিফপুর বড়বাড়ি এলাকার বাসিন্দা মজনু মিয়া জানান, রফিকুল ইসলাম অচল হয়ে পড়ায় তাঁর সংসারের হাল ধরেছিলেন একমাত্র ছেলে পলাশ। তাঁকে হারিয়ে কিভাবে এখন সংসার চলবে, সেটা নিয়েও উদ্বিগ্ন পরিবারটি।

No comments

Powered by Blogger.