স্থূলতা কমানো ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার ওষুধ by ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

প্রতিবছর বিশ্বে এক কোটি ৫০ লাখ শিশু মারা যায় ক্ষুধার কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ক্ষুধার্ত। প্রতি ৩.৬ সেকেন্ডে কোনো একজন মারা যায় ক্ষুধার তাড়নায়। আমাদের উপমহাদেশ এবং আফ্রিকায় বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষুধার্ত মানুষের বসবাস।


নব্বইয়ের দশকে ১০ কোটির বেশি শিশু ক্ষুধার কারণে মৃত্যুবরণ করেছিল। এই লেখাটি পড়তে যে সময়টুকু অতিবাহিত হবে তখনো কম করে হলেও ২০০ মানুষ ক্ষুধায় মারা যাবে। পৃথিবীর প্রায় ১০০ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে। বিশ্বব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, অপুষ্টিতে আক্রান্ত এসব মানুষের ৮০ শতাংশ শিশু ও মহিলা।
এবার একটি বিপরীতধর্মী প্রসঙ্গ। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের অতিশয় স্থূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের মেয়রদের সম্মেলনে বক্তৃতা প্রদানকালে তিনি বলেন, স্থূলতা মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে এবং এই স্থূলতা আমেরিকার স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য এক মহা বিপদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। শরীরে মাত্রাতিরিক্ত চর্বি জমা হলে মানুষ অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যায়। জেনেটিক বা জৈবিক কারণ ছাড়াও মানুষের লাইফস্টাইল বা জীবনপদ্ধতি স্থূলতার জন্য বিশেষভাবে দায়ী। সহজ ভাষায় বলি, মানুষ খাবারের মাধ্যমে অতি বেশি পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ করে যৎসামান্য ক্যালরি খরচ করলে অর্থাৎ পর্যাপ্ত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম না করলে মানুষের ওজন বাড়তে শুরু করে। তার মানে, ক্যালরি গ্রহণ ও ক্যালরি খরচের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, স্থূলতার সঙ্গে প্রাচুর্যের একটি নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। যাদের প্রচুর টাকাকড়ি আছে, তারা প্রচুর ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার বেশি খায় এবং ঘন ঘন খায়। প্রয়োজনের তুলনায় অতি বেশি ক্যালরি শরীর কাজে লাগাতে পারে না। তাই বাড়তি ক্যালরি শরীর চর্বিতে রূপান্তরিত করে শরীরে পুঞ্জীভূত করে। যুক্তরাষ্ট্রে ঠিক এই কাজটি ঘটে যাচ্ছে আর তা মিশেল ওবামার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান মোতাবেক যুক্তরাষ্ট্রের ৩২ শতাংশ শিশু ও কিশোর অতিমোটা বা স্থূলতায় আক্রান্ত। ছয় থেকে ১১ বছর বয়সের ২০ শতাংশ এবং ১২ থেকে ১৯ বছর বয়সের ১৮ শতাংশ শিশু-কিশোর স্থূল। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে এরা মোটা মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠবে এবং বাকি জীবন স্থূলতা নিয়ে কাটাবে। বিপদ আরো আছে। অতি স্থূল মানুষ অতি সহজে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রোক ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করে। অতিকায় দেহ বা ওজন নিয়ে মানুষ বেশি চলাফেরা বা কাজকর্ম করতে পারে না। এতে কর্মক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা হ্রাস পাওয়ার কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। মিশেল ওবামার পরিকল্পনা মোতাবেক স্থূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মৌলিক পদক্ষেপ হলো- কম খাওয়া ও ওজন কমানোর জন্য বেশি পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা। বেশি থাকতে কম খাওয়া- এটা এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। আমি পৃথিবীর বহু দেশে গেছি। একমাত্র অস্ট্রেলিয়া ছাড়া সব উন্নত দেশেই আমার বসবাসের সুযোগ হয়েছে। জাপান ছাড়া আর সব উন্নত দেশেই মানুষের লাইফস্টাইল একই রকম। জাপানিদের খাওয়া-দাওয়া সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত বলে সেখানে স্থূলতা এখনো মহামারি আকারে দেখা দেয়নি। কিন্তু অন্যান্য উন্নত দেশে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে খাবার-দাবারের প্রাচুর্য চোখে পড়ার মতো, দামেও সস্তা। উন্নত বিশ্বের শিশু-কিশোর এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের প্রিয় ও আকর্ষণীয় খাবারের তালিকায় রয়েছে আইসক্রিম, জাঙ্ক ফুড ও প্রচুর চিনিসমৃদ্ধ কোমল পানীয়। প্রায়শ সব আইটেমই হয় জাম্বো সাইজের। এসব খাবার অত্যন্ত মুখরোচক হয়। খেয়ে অপরিসীম আনন্দ ও তৃপ্তি পাওয়া যায়। ক্যালরিতে ভরপুর এসব খাবার ঘন ঘন খেয়ে শিশুরা অল্প সময়ের মধ্যে মোটা হতে শুরু করে। তারপরও তাদের খাবারের প্রতি অনীহা থাকে না এবং আকর্ষণ বাড়ে অতি মাত্রায়। খাবারের প্রতি আকর্ষণ মানুষকে আরো বেশি পরিমাণে খেতে প্রলুব্ধ করে। ফলে ওজনও বাড়ে সমান তালে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, বিশ্বে খাদ্য উৎপাদনে ব্যর্থতা বা উৎপাদন প্রযুক্তির কোনো খুঁত বা সীমাবদ্ধতা নেই। সমস্যা রয়েছে প্রত্যেক মানুষকে পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহে সুযোগ প্রদানের। আরেক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে- বিশ্বে যে পরিমাণ সম্পদ ও খাদ্য মজুত আছে, তার সুষম বণ্টন হলে বিশ্বের কোনো মানুষ দরিদ্র থাকে না এবং খাদ্যের অভাবে অভুক্ত অবস্থায় মারা যায় না। সম্পদ ও খাদ্যের সুষম বণ্টনই মূল সমস্যা। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে খাদ্যের সুষম বণ্টন কোনো সময়ই বাস্তবে রূপ লাভ করবে বলে আশা করার কোনো কারণই নেই। তাই এই অসম সমাজব্যবস্থায় কেউ না খেয়ে মরবে, আর কেউ অতিমাত্রায় খেয়ে মারা যাবে। এই সংকট উত্তরণে অশুভ ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে বিশ্বের ওষুধ কোম্পানিগুলো। দারিদ্র্যের কারণে মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে। অপুষ্টি শরীরে হাজারো রোগ ডেকে আনে। আর অপুষ্টিজনিত রোগ প্রতিকারে রকমারি ওষুধ নিয়ে এসেছে ওষুধ কম্পানিগুলো। লেখকের 'ওষুধ সম্পর্কে সচেতন হোন' বইটিতে 'দারিদ্র্য চিকিৎসায় ওষুধ' শীর্ষক প্রবন্ধে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। বর্তমান প্রবন্ধে স্থূলতা প্রতিকারে ওষুধ কম্পানিগুলোর ভূমিকা কী তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
মাত্র কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) একটি কম্পানির স্থূলতা কমানোর ওষুধ বেলবিক বাজারজাত করার অনুমতি প্রদান করেছে। বেলবিক একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ এবং স্থূলতা কমানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে গ্রহণ করতে হবে। স্থূলতার কারণে যাদের কোলেস্টেরল মাত্রা বেড়ে যায় বা যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের জন্য ওষুধটি প্রযোজ্য হবে। যুক্তরাষ্ট্রে স্থূলতার হার ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণে চিকিৎসকদের চাপের মুখে এফডিএ ওষুধটি বাজারজাত করার অনুমতি দিল। স্থূলতা কমানোর ওষুধের তালিকায় আরো অনেকগুলো ওষুধ অপেক্ষারত আছে, যেগুলো মাত্রাতিরিক্ত ও জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের কারণে ছাড়পত্র পাচ্ছে না। এফডিএ বলেছে, এরেনা কম্পানির ওষুধ বেলবিক মস্তিষ্কে অনেক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে ক্ষুধামন্দা সৃষ্টি হয়। ওষুধটি খেলে মানুষের মনে হবে অল্প খেয়েও তারা তৃপ্ত হচ্ছে এবং ভূরিভোজনের স্বাদ পেয়েছে। ২০১০ সাল থেকে এরেনা কম্পানি ওষুধটি বাজারজাত করার অনুমতি চেয়ে আসছিল। কিন্তু ওষুধের নিরাপত্তাজনিত পর্যাপ্ত তথ্য কম্পানিটি সরবরাহ করতে না পারার কারণে এত দিন এর ছাড়পত্র মেলেনি।
ওজন কমানোর ওষুধগুলো সাধারণত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত হয় না। এ ধরনের বেশ কিছু ওষুধের অতীত ইতিহাস ভালো নয়। ফেনফেন যখন প্রথম বাজারজাতের অনুমতিপ্রাপ্ত হয়েছিল, তখন মানুষ এই ওষুধ অলৌকিক বলে আখ্যায়িত করেছিল। কিন্তু এফডিএ তথাকথিত অলৌকিক ওষুধটিকে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে ১৯৯৭ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ওজন কমানোর ওষুধের মধ্যে জেনেনটেক বাজারজাত করে জেনিক্যাল এবং গ্ল্যাক্সোর ওজন কমানোর ওষুধটির নাম অ্যালি। ওষুধগুলো যথাক্রমে প্রেসক্রিপশন ও ওটিসি (যে ওষুধ কিনতে প্রেসক্রিপশন লাগে না) ড্রাগ। বাজারজাত করার পর ওষুধগুলো ভালোই ব্যবসা করেছিল। কিন্তু ইদানীং আর সেই সুদিন নেই। ২০০৭ সালে অ্যালির বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৪৭ মিলিয়ন ডলার, যা ২০১০ সালে নেমে আসে ৮৪ মিলিয়ন ডলারে। ওষুধগুলোর বিক্রির পরিমাণ নেমে যাওয়ার কারণ হলো, মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম হলো যকৃতের ক্ষতিসাধন, কিডনি ধ্বংস, অবসন্নতা, মাথাব্যথা, ক্ষুধামন্দা। ১৯৯৯ সালে জেনিক্যাল বাজারজাত হওয়ার পর প্রায় চার কোটি মানুষকে ওষুধটি প্রদান করা হয়েছিল। এখন জেনিক্যালের আর তেমন কদর নেই। ব্রুকহ্যাভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির মেডিক্যাল রিসার্চের চেয়ারম্যান ড. জিন জেক ওয়াং বলেন, ওজন কমানোর জন্য আমাদের কাছে কোনো ম্যাজিক বুলেট নেই। সম্ভবত আমাদের বোমা ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। সমস্যাটি উপলব্ধি করার মতো ক্ষমতা আমাদের থাকা দরকার। হেলথ রিসার্চ গ্রুপের ডাইরেক্টর ড. সিডনি ওলফ ওজন কমানোর কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কৃত হবে বলে আশাবাদী নন। তিনি বলেন, এমন কোনো ওষুধ পাওয়ার সম্ভাবনা শূন্য, যা শুধু নিরাপদে ওজন কমাবে অথচ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে না। অল্প কয়েক দিন আগে পাবলিক সিটিজেন হেলথ রিসার্চ গ্রুপ- দীর্ঘকালীন ব্যবহারের প্রেসক্রিপশন ড্রাগ ওরলিস্টেট নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য এফডিএর কাছে লিখিত প্রস্তাব পেশ করেছে। গ্রুপটি বলছে, ওরলিস্টেট জেনিক্যাল ও অ্যালির মতো লিভারের ক্ষতিসাধন করে ও কিডনি ধ্বংস করে।
স্থূলকায় লোকদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ছাড়াও স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। ওজন কমানোর ওষুধ প্রদানের মাধ্যমে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। ওজন কমানোর ওষুধ প্রদানের মাধ্যমে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক গুণ বেড়ে যায়। এটা অনেকটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। শুধু বেশি খাবার খাওয়ার জন্যই সব সময় ওজন বাড়ে না, ওজন বাড়ার সঙ্গে খাবার ছাড়াও আবেগ, জৈবিক, সামাজিক, মনস্তাত্তি্বক, পরিবেশসহ আরো বহু কারণ জড়িয়ে আছে। সুতরাং এতগুলো বহুমুখী সমস্যা সমাধানের জন্য একটি মাত্র বড়ি আবিষ্কার রীতিমতো অসম্ভব ব্যাপার। যখন কম খাবার ছিল, তখন তা অন্বেষণে আমাদের প্রচুর খাটাখাটি ও পরিশ্রম করতে হতো। আর এখন কোনো কিছু না করেই হাতের কাছে সব রকম খাবার প্রচুর পরিমাণে পাচ্ছি। বিশ্বায়নের যুগে আজকাল সব দেশেই ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে লবণ, চিনি ও চর্বি জুড়ে তার স্বাদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিজ্ঞাপন ও সামাজিক স্ট্যাটাস প্রতিনিয়ত আমাদের অতিভোজনে প্ররোচিত করছে। লোভনীয় খাবারের ছবি ও বর্ণনা আমাদের লোভকে অতিমাত্রায় উস্কে দিচ্ছে। তাই আমরা খাচ্ছি আর মোটা হচ্ছি। আর ওষুধ খেয়ে স্থূলতা কমানো- সে তো এক আত্মঘাতী ব্যাপার।
তাহলে উপায়? উপায় একটা আছে। তা শক্ত হলেও অসম্ভব নয়। আমাদের লোভ সংবরণ করতে হবে। যার জিহ্বা সংযত তার স্বাস্থ্য সুসংহত। আগে যেমন বলেছি- শরীরের প্রয়োজনে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করলে তা জ্বালিয়ে দিতে হবে, জমতে দেওয়া যাবে না। সুষম খাবার উৎকৃষ্ট খাবার। ক্যালরি জ্বালাতে হলে আমাদের একটু কষ্ট করতে হবে। আর তা হলো ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম। লাইফস্টাইল পরিবর্তন, সুষম খাবার, শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট রাখে, সুস্থ রাখে। শরীর ফিট ও সুস্থ থাকলে মানুষকে দেখতে সুন্দর ও স্মার্ট লাগে। আর এ দুনিয়ায় সুন্দর ও স্মার্ট থাকতে কে না চায়!

লেখক : অধ্যাপক, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাবি এবং
প্রো-ভিসি, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.