বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁস-দায় পিএসসিকেই নিতে হবে

সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ৩৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিতের অজুহাত হিসেবে 'অনিবার্য' কারণের কথা বললেও এটা সহজেই বোধগম্য যে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাই তাদের এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। এ প্রশ্নও এখন যৌক্তিক যে, কেবল নতুন সময়সূচি ঘোষণা করেই কি প্রতিষ্ঠানটি দায় এড়াতে পারে?


'কিছু একটা হয়েছে' চেয়ারম্যানের এ বক্তব্য শাক দিয়ে মাছ ঢাকার শামিল। মনে রাখা জরুরি, কেবল হাজার হাজার মেধাবী চাকরি প্রার্থীর বিড়ম্বনা ও আশাভঙ্গের বিষয়টি এর সঙ্গে যুক্ত নয়। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, স্বভাবতই তাদের নিজস্ব পাঠ কার্যক্রম পুনর্বিন্যস্ত করতে হবে। পিএসসির নতুন সময়সূচি অনুসরণ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলগুলোকে ফের রুটিন ভাঙতে হবে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি নিশ্চিত। সারাদেশের হাজার হাজার বিসিএস পরীক্ষার্থীর অনেকেই কর্মজীবী। তাদেরও আরেক দফা ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন হবে। কর্মক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। পরীক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই বিভাগীয় শহরগুলোতে জড়ো হয়েছেন। নিষ্ফল আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়ার খরচের কথাও ভাবতে হবে। পিএসসি কি এসবের দায় নিতে প্রস্তুত? খোদ পিএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রসহ আনুষঙ্গিক যে খরচ করেছে, তা বৃথাই গেল। রাষ্ট্রীয় অর্থের এই অপচয়ের কি জবাবদিহিতা থাকবে না? এসবের মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পূরণ হবে কীভাবে? ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পাওয়ার আসায় যারা লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন, তাদের কথাও ভুলে যাওয়া চলবে না। এদের অনেকেই হয়তো চাকরি পেতে মরিয়া হয়ে শেষ সম্বল বিক্রয় করেছে। ফাঁসের সুযোগ না থাকলে তারা হয়তো বৈধ পথেই সোনার হরিণ ধরার চেষ্টা করত। এটা ঠিক, এর আগেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। আমরা মনে করি, সেগুলোর উপযুক্ত প্রতিবিধান হয়নি বলেই নতুন করে ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবারের অঘটনের চরিত্র থেকে স্পষ্ট_ মূলত একটি চক্রই মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মাধ্যমে জাল ছড়িয়ে থাকে। তাদের শনাক্ত ও আটক করা কঠিন নয় বলে আমরা বিশ্বাস করি। এ ব্যাপারে পিএসসির একজন সদস্যকে নিয়ে কানাঘুষা চলছে। সংবাদমাধ্যমে কয়েক দিন আগে থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংবাদ প্রকাশ হলেও তারা সেটাকে 'গুজব' বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। সময়মতো সজাগ হলে পুরনো সময়সূচিতেই নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া যেত। বিলম্বে হলেও অর্থ, ভাবমূর্তি এবং সময় ও শ্রমের অপচয়ের এই খেলা বন্ধ করতেই হবে। সেক্ষেত্রে পিএসসির কর্মকর্তাদের জবাবদিহির বিকল্প নেই। প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অনেক কারণই থাকতে পারে। কিন্তু জবাব দিতে হবে পিএসসিকেই। সরকারের উচিত হবে, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটিতে নিষ্কর্মা লোকজন সরিয়ে যত দ্রুত সম্ভব যোগ্য লোক নিয়োগ দেওয়া। যারা প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানোর মতো প্রাথমিক
কাজের যোগ্যতা রাখেন না, তারা প্রথম শ্রেণীর পদে যোগ্য প্রার্থীকে
নিয়োগ দেবেন কীভাবে?
 

No comments

Powered by Blogger.