বন্দরের মুখে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির উদ্যোগে বিস্ময় বাণিজ্যমন্ত্রীর

চট্টগ্রাম বন্দরের মুখে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সরকারি পরিকল্পনায় বিস্মিত স্বয়ং বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের। গতকাল রবিবার ব্যবসায়ী নেতা, বাণিজ্য বিশ্লেষক ও কর্মকর্তাদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম প্রকৃতপক্ষে সমুদ্রবন্দর নয়, এটি একটি নদীবন্দরের মতো।


এর মুখে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে বন্দরের ক্ষতি হবে। জানি না এটা কিভাবে হলো। বাংলাদেশে সবই সম্ভব।
বন্দরের মুখে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী সরকারের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেন।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) অনুষ্ঠানে এর আগেই চট্টগ্রাম বন্দরের মুখে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনার তীব্র প্রতিবাদ জানান এ কে খান অ্যান্ড কম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন কাশেম খান। তিনি বলেন, এটি তৈরি হলে নদীর মোহনায় বড় বড় জাহাজে করে কয়লা নিয়ে আসতে হবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ চলাচলে জট সৃষ্টি হবে। সিভিল এভিয়েশনসহ অনেকে এটি তৈরির বিরোধিতা করেছে। কোনো সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করে এ প্রকল্প কেন নেওয়া হলো- এ প্রশ্নও করেন তিনি।
এমসিসিআই ভবনে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সহযোগিতায় আয়োজিত ওই আলোচনা সভায় এমসিসিআইয়ের সভাপতি আমজাদ খান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের চেয়ে আমদানি করা সহজ। এখানে আমদানির ক্ষেত্রে সামান্য কিছু বাধা আছে। তবে অশুল্ক বাধা নেই বললেই চলে। কিন্তু রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিভিন্ন বাধার মুখে পড়ে।
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক বাধার চেয়ে অশুল্ক বাধাই বড় হয়ে উঠে আসে আলোচনায়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ বর্তমানে বছরে প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলারের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা দূর করতে পারলে এ বাণিজ্য প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার হতে পারত। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো বাংলাদেশের প্রধান বাজার ইউরোপের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করছে। আগামী দিনগুলোতে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে বাণিজ্যের বাধা দূর করতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আমদানি-রপ্তানিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুয়ারে দুয়ারে ঘোরা, দীর্ঘসময় লাগা, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, বন্দরের অদক্ষতা, অবকাঠামো সমস্যাকে বাণিজ্যের বড় বাধা বলে উল্লেখ করেন ব্যবসায়ীরা। অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সহজ করতে পৃথিবীর বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশে একটি 'ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিল' গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
বাণিজ্য সহজীকরণে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে অর্থ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বাণিজ্য সহজীকরণে কিছু সূত্র দিয়েছিল। কিন্তু সরকার তাদের বলেছে, দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করেই এ বিষয়ে কাজ করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, অবকাঠামো সমস্যা দূর করার চেয়েও ব্যবস্থার পরিবর্তন করা বেশি কঠিন। এখানে বিভিন্ন মহলের স্বার্থ থাকে। এ কারণে 'সিস্টেম' পরিবর্তন করা যায় না। এটাকে গণতন্ত্রের মূল্যও বলা যায়।
বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মুজিবর রহমান বলেন, শুল্ক কমানোর ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্য বেড়েছে। তবে বর্তমানে যে বাণিজ্য হয়, তার ৩২ শতাংশ বেশি হতে পারত বাণিজ্য সহজ হলে। অনেক দেশ বাণিজ্য সহজ করতে বিশেষ কাউন্সিল গঠন করেছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা আছেন। বাংলাদেশেও এমন কিছু একটা গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. শাহাব উল্লাহ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহসভাপতি ড. সাদিক আহমেদসহ ব্যবসায়ী ও সাবেক বেশ কয়েকজন আমলা বক্তব্য দেন। এতে বাণিজ্যের বাধা নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান রমা দেওয়ান।

No comments

Powered by Blogger.