বিএনপির সাংসদের উসকানিতেই রামুতে হামলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনায় বিরোধী দল বিএনপির স্থানীয় সাংসদ লুত্ফুর রহমানকে দোষারোপ করে বলেছেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে রামুতে হামলার আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন সেখানকার উত্তেজিত মানুষকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল।


কিন্তু সেই সময় বিএনপির স্থানীয় সাংসদ গিয়ে সেখানে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তারপর হাজার হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে মন্দিরে আগুন দেয়।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারের রামু উপজেলার কিজারী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জনসভাস্থলে বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। এই মাঠের পাশে রামুর কেন্দ্রীয় বৌদ্ধবিহার। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে বিহারটি পুড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। মাঠের পূর্ব পাশে বৌদ্ধদের ১৫টি ঘরও পোড়ানো হয় ওই রাতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনায় তিনি মর্মাহত ও হতাশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এর আগে এ রকম জঘন্যতম ঘটনা ঘটেনি। আন্তর্জাতিকভাবে দেশের সম্মান ক্ষুণ্ন করতেই এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, হামলার ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া হবে।
জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, পুড়ে যাওয়া ১২টি বৌদ্ধবিহারের সংস্কার সরকারি অর্থে করা হবে। তিনি বলেন, বৌদ্ধবিহারগুলোর সংস্কারের জন্য যা যা করা দরকার, সরকারের পক্ষ থেকে তা করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভান্ডার থেকে এক কোটি ৩৪ লাখ আর বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে দুই কোটি ৪৮ লাখ নগদ টাকা (মোট তিন কোটি ৮২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ) ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দেওয়া হবে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের গৃহনির্মাণের জন্য ৩০৭ বান টিন, ৩৫.৬২ মেট্রিক টন চাল, ২৪৬টি কম্বল, ১০৭ বান্ডিল কাপড়চোপড় ও স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ২৯ সেট বই দেবে সরকার।
জনসভাস্থল থেকে পুড়ে যাওয়া বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়িতে গিয়ে ত্রাণ দেন শেখ হাসিনা। এরপর তিনি কক্সবাজারে যাবেন। সেখানে সরকারি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন।
জনসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, বীর বাহাদুর এমপি, তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ কে আহম্মেদ হোসেন। বক্তব্য দিয়েছেন পুড়ে যাওয়া রামু কেন্দ্রীয় শিলাবিহারের পরিচালক সত্যপ্রিয় মহাথেরো।
এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি রামুতে যান। রামুতে উগ্রবাদী দুষ্কৃতকারীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধমন্দির ও বসতবাড়ি পরিদর্শন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রাণ ও অনুদানের অর্থ বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলা সদরে দুষ্কৃতকারীদের একাধিক দল বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের শত বছরের পুরোনো ১২টি বৌদ্ধবিহার ও মন্দিরে আগুন লাগায়। পুড়িয়ে দেয় বৌদ্ধপল্লির ৪০টির মতো বসতবাড়ি। ভাঙচুর করে শতাধিক ঘরবাড়ি।
বৌদ্ধধর্মাবলম্বী এক তরুণের ফেসবুকে (সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম) পবিত্র কোরআন শরিফের অবমাননাকর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে—এমন অভিযোগে শনিবার গভীর রাতে ওই হামলা চালানো হয়।
রামুর ঘটনার পর টেকনাফ, উখিয়া, পটিয়ায় বেশ কয়েকটি বৌদ্ধবিহার ও বাড়ি এবং একটি হিন্দু মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট চালায় দুষ্কৃতকারীরা।

No comments

Powered by Blogger.