১১তম সুখী দেশ-এ অর্জন ধরে রাখতে হবে

অভাব-অভিযোগের অন্ত নেই। বাজারে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া, বাড়ছে বাড়ি ভাড়া। অভাবী মানুষের সংখ্যাও নাকি বাড়ছে দিনের পর দিন। ছিন্নমূল মানুষ ছুটছে শহরের দিকে একটু আশ্রয়ের আশায়। বাতাসে দূষিত উপাদান, শুকিয়ে যাচ্ছে নদী। রাজধানীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা বুড়িগঙ্গায় এমনই দূষণ, সেখানে নাকি পানির কীটও বাঁচতে পারে না।


কারখানার বর্জ্যে ব্যবহার অনুপযোগী দেশের অনেক নদীর পানি। সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। একটু বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সবখানেই। লোডশেডিং এখন নিয়মিত রুটিন। কালোবাজারে চলে যায় ট্রেনের টিকিট। শেয়ারবাজারে সর্বস্ব খুইয়ে মানুষ বেছে নেয় আত্মহননের পথ। বন্ধ হয়ে যায় বিদেশে চাকরি প্রার্থীদের ভিসা-সুবিধা। হাসপাতালে চিকিৎসকরা গরহাজির। ঘুষ নিয়ে তো বিশ্বজুড়ে তোলপাড়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে একটি চিহ্নিত মহল, লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গাটি পর্যন্ত নেই। ঠিক তখনই কিন্তু এলো সুখের খবর। বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় ১১তম স্থানটি বাংলাদেশের। বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের এই একাদশ স্থান অর্জনের সৌভাগ্যকে কি খাটো করে দেখার সুযোগ আছে? না, নেই। বাংলাদেশকে ১১তম সুখী দেশ হিসেবে এমনিতেই নিশ্চয় স্থান করে দেওয়া হয়নি। আবার বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানও এ তালিকাটি তৈরি করেনি। তালিকাটি করেছে যুক্তরাজ্যের একটি বেসরকারি সংস্থা। নিউ ইকোনমিকস ফাউন্ডেশন নামের এ প্রতিষ্ঠানটি অর্ধযুগ ধরে এমন তালিকা করে আসছে, যাকে বলা হচ্ছে 'হ্যাপি প্ল্যানেট ইনডেক্স'।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এই সুখের সূচক কী? সুখের সূচক কিংবা মাত্রা নির্ণয়ে স্বচ্ছতা রাখা হয়েছে তো? ২০০৬ সাল থেকে যে প্রতিষ্ঠানটি এই সুখী দেশের তালিকা করছে, তাদের প্রথম তালিকার দিকেও দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে। ২০০৬ সালের 'হ্যাপি প্ল্যানেট ইনডেক্স'-এ বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪১। সেখান থেকে গত ছয় বছরে বাংলাদেশ একটু একটু করে উঠে এসেছে ১১-তে। পেছনে ফেলেছে নিকট-প্রতিবেশী ভারতকে। সার্কভুক্ত পাকিস্তান-আফগানিস্তানও বাংলাদেশের পেছনে। যে দেশের প্রতিষ্ঠানটি এই তালিকা তৈরি করেছে, সুখী দেশ হিসেবে সেই যুক্তরাজ্য এবার ৪১তম অবস্থানে।
'হ্যাপি প্ল্যানেট ইনডেক্স' তৈরিতে বিবেচনা করা হয়েছে মানুষের গড় আয়ু, সুখ-সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পরিবেশগত প্রভাবসহ বিভিন্ন বিষয়। তা সে যে বিষয়ই বিবেচনা করা হোক না কেন, বাংলাদেশ যে ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। অর্জনটি একেবারে ফেলে দেওয়ার নয়। বরং এই অর্জন ধরে রাখতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। সমৃদ্ধির বিকল্প নেই- এই সত্য উপলব্ধি করে অগ্রসর হতে হবে। সুখী দেশ হিসেবে ১১তম হলেও এ দেশের সব মানুষই সমান সুখী নয়। তাই সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব প্রতিটি মানুষের জন্য সুখ, সমৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করা।
পৃথিবীতে সবাই তো সুখী হতে চায়। ১১তম সুখী দেশ বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় আমাদের প্রার্থনা, 'চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, চাই আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু'।

No comments

Powered by Blogger.