আজমকে কেউ লুকিয়ে রেখে এখন বের করেছে

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভিতে সম্প্রচার হওয়া নিজের গাড়িচালক আজম খানের সাক্ষাৎকারের বক্তব্য অস্বীকার করেছেন সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার। সাক্ষাৎকারে আজম খান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের যে অভিযোগ তুলেছেন,


তা অস্বীকার করে ওমর ফারুক বলেন, 'ঘটনার দিন গাড়িতে থাকা টাকা গোনাই হয়নি। তবে গাড়িতে ৭৪ নয়, ৭০ লাখ টাকা ছিল।'
গতকাল শনিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওমর ফারুক বলেন, 'আজম খানের তো আগে লম্বা দাড়ি ছিল। আরটিভিতে যার নাম আজম খান বলা হচ্ছে, তার তো দাড়ি নেই। তাকে আজম বলে চিনতে কষ্ট হয়েছে।'
চিনতে কষ্ট হবে কেন, এই আজম কি আপনার গাড়িচালক ছিলেন না- এ প্রশ্নের জবাবে ফারুক বলেন, 'আজম খান আমার গাড়ি চালিয়েছে পৌনে দুই বছর। তার সঙ্গে আমার সুসম্পর্কই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সে কেন গাড়ি বিজিবির গেট দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিল সেটাই প্রশ্ন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে বিপদে ফেলার জন্য কেউ তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে।' ফারুক প্রশ্নের সুরে বলেন, 'এত দিন এই আজম কোথায় ছিল? হঠাৎ সে কোথা থেকে বের হলো? মনে হয়, আজমকে কেউ লুকিয়ে রেখে সময়মতো বের করেছে। তারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়।'
এর সঙ্গে রাজনীতি জড়িত কি না জানতে চাইলে ফারুক বলেন, 'অবশ্যই রাজনীতি চলছে।'
আজম খান আরটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রেলের নিয়োগ-বাণিজ্য সিন্ডিকেটের মূল হোতা ছিলেন ওমর ফারুক। এর সঙ্গে রেলের পূর্বাঞ্চলের সাবেক জিএম ইউসুফ আলী মৃধা, কমান্ড্যান্ট এনামুল হকসহ অন্যরাও ছিলেন। এর সঙ্গে সেনা সদস্য মেজর মশিউর রহমান ছিলেন বলেও সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন আজম খান। এ বিষয়ে ওমর ফারুক বলেন, 'নিয়োগ-বাণিজ্যের সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না। আজম মেজর মশিউর নামে যাঁর কথা বলছে, তাঁকে আমি চিনি না। আজম তার এই বক্তব্যে সেনাবাহিনীকেও কলঙ্কিত করতে চাইছে। যদি নিয়োগ-বাণিজ্য করতাম, তাহলে কি কোনো মেজরকে সঙ্গে নিয়ে সেটা করতাম?'
গত ৯ এপ্রিল বিজিবি গেটে ঘটনার পর থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে এখন সম্পর্ক কেমন জানতে চাইলে ফারুক বলেন, 'এ ঘটনার সূত্র ধরে তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ওই রাতের পর থেকে তাঁর সঙ্গে আমার আর কোনো যোগাযোগ নেই।'
ফারুক বলেন, 'সেদিন বিজিবিতে গাড়ি ঢোকানোর ২০ মিনিট পর আমার কাছে একটি ফোন আসে। প্রথম ফোন করেছিলেন একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি আটকা পড়েছেন নাকি? কিছুক্ষণ পর দেখি, বিজিবি গেটের সামনে ক্যামেরা হাজির। আমার প্রশ্ন, শুধু একজন সাংবাদিক এ ঘটনা জানলেন কিভাবে?'
আজম খান গাড়িতে ৭৪ লাখ টাকা ছিল বলে যে দাবি করেছেন, তা অস্বীকার করে ফারুক বলেন, '৭৪ নয়, ৭০ লাখ টাকা ছিল। সে ৭৪ লাখ টাকা কোথায় পেল? আমার টাকা বিজিবিতে গোনা হয়নি। বিজিবির কেউ টাকা ধরেনি। আজম বলেছে সকালে টাকা গোনা হয়েছে, সেটাও ঠিক নয়।'
ওই টাকার উৎস কী ছিল জানতে চাইলে ফারুক বলেন, 'এসব টাকা ছিল আমার। এটা কোনো নিয়োগ-বাণিজ্যের টাকা ছিল না। আমি আমার আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে এই টাকা পেয়েছি। ৭০ লাখ টাকা আমি পরদিন আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমাও রাখি। দুদকেও আমি আমার আয়ের হিসাব দিয়েছি। আমি ৭০ লাখ টাকার উৎস কী তাও জানিয়েছি দুদককে। বিজিবি গাড়ি তল্লাশি করেনি।'
আজম খান সুরঞ্জিত সেনের বিরুদ্ধে ৬০০ জনকে রেলে নিয়োগ দেওয়ার যে অভিযোগ তুলেছেন, তা অস্বীকার করে ওমর ফারুক বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিয়োগের কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেননি।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রাখার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলার বিষয়ে ফারুক বলেন, 'দুদক একটি মামলা করেছে। আমি জামিনে মুক্ত আছি। অনেকে বলে আমি পালিয়ে আছি। এটা ঠিক নয়। আমি আদালতে প্র্যাকটিস করছি নিয়মিত।'

No comments

Powered by Blogger.