বেকারত্ব কমায় উজ্জীবিত ওবামা শিবির

যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার কমেছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দায়িত্ব নেওয়ার পর এ হার এখন সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি যেমন সুখবর, তেমনি ওবামার প্রচার শিবিরকেও এ খবর দারুণভাবে উজ্জীবিত করেছে।


দেশের অর্থনীতি ধীরে হলেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে ওমাবার দাবিকেই আরো জোরালো ভিত্তি দিল শ্রম দপ্তরের শুক্রবার প্রকাশিত নতুন পরিসংখ্যান।
তবে ওবামার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রমনি বিষয়টিকে এত সরলভাবে নিতে নারাজ। তিনি মনে করেন, নতুন তথ্য 'প্রকৃত অর্থে সামলে ওঠা' নয়, বরং বহু মানুষ চাকরি খোঁজার চেষ্টা ছেড়ে দেওয়ায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
শ্রম দপ্তর গত শুক্রবার জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার ৮.১ শতাংশ থেকে নেমে গত সেপ্টেম্বরে ৭.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরগুলোতে শ্রম বিভাগের চালানো জরিপে দেখা যায়, এক লাখ ১৪ হাজার নতুন কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে এ সময়ে। একই সঙ্গে ছাঁটাইয়ের হারও কমেছে। ফলে বিষয়টি বেকারত্বের হার কমাতে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলেছে। হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টাবিষয়ক পরিষদের সভাপতি অ্যালেন ক্লুগার বলেন, 'গত ৩১ মাস থেকেই বেসরকারি খাতে চাকরির সুযোগ বাড়ছে। এই সময়ে বেসরকারি খাতে ৫২ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।'
তবে একেবারে খুঁটিয়ে দেখতে গেলে নতুন তথ্যের পুরোটাই ওবামার জন্য ইতিবাচক নয়। উৎপাদন খাতে টানা দ্বিতীয় মাসের মতো কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে। খণ্ডকালীন চাকরি করেন এমন লোকের সংখ্যাও পাঁচ লাখ ৮০ হাজার বেড়েছে। বর্তমানে সরকারি হিসাবে এক কোটি ২১ লাখ আমেরিকান বেকার। এ সংখ্যা এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল এক কোটি ৩৯ লাখ।
গত বুধবারের প্রথম দফা প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে চনমনে রমনির তুলনায় কিছুটা ম্লান ছিল ওবামার উপস্থিতি; যদিও পরদিনই তা ঝেড়ে ফেলে নিজেকে গুছিয়ে নেন তিনি। আর শুক্রবারের তথ্য তাঁর স্মিত হাসিকে আরো প্রশস্ত করেছে। ভার্জিনিয়ায় প্রচারকালে ওবামা বলেন, 'আজ আমি বিশ্বাস করি, জাতি হিসেবে এগোচ্ছি আমরা। বিল ক্লিনটনের সময় দেশের মজবুত অর্থনীতি জর্জ বুশের আমলে এসে প্রধানত দুটি কারণে বড় ধরনের ধাক্কা খায়। বুশ পর পর দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডের ওপর থেকে কর প্রত্যাহার করেন। এখন গভর্নর রমনি ধনীদের সুবিধার্থে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার কর হ্রাসের কথা বলছেন।' ধারণা করা হচ্ছে, নতুন তথ্য ওবামার পক্ষে জনমতের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। জরিপগুলোতে অবশ্য ওবামা এখনো এগিয়ে। তবে রমনির দাবি, শ্রম দপ্তরের পরিসংখ্যান এবং ওবামা শিবিরের দাবির মধ্যে কিছুটা ফারাক রয়েছে। তিনিও গত শুক্রবার ভার্জিনিয়াতেই প্রচার চালান। এক বিবৃতিতে রমনি বলেন, 'এটা প্রকৃত পুনরুদ্ধার নয়। আগের মাসের তুলনায় নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে অল্পই।' তাঁর দাবি, অনেকে নতুন করে চাকরি খোঁজা ছেড়ে দিয়েছে। তাঁর বক্তব্যের সমর্থন শ্রম দপ্তরের পরিসংখ্যানেও পাওয়া যায়। তাদের হিসাবে, বেকার অথচ চাকরির খোঁজ করছেন না এমন লোকের সংখ্যা ৬৭ লাখ। এক বছর আগের তুলনায় যা বেশ বেশি।
আগামী ৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার এখন তুঙ্গে। দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা বিতর্ক হবে ১৬ অক্টোবর নিউ ইয়র্কে। সূত্র : এএফপি, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.