পবিত্র কোরআনের আলো-কঠিন বিপদ-আপদেই মানুষের উৎকর্ষের পরীক্ষা হয়

১৫৫. ওয়ালানাবলুআন্নাকুম বিশাইয়িম মিনাল খাওফি ওয়ালজূয়ি' ওয়ানাক্বছিম্ মিনাল আমওয়া-লি ওয়ালআনফুছি ওয়াছ্ছামারা-তি; ওয়াবাশ্শিরিছ্বাবিরীন। ১৫৬. আল্লাযীনা ইযা-আছ্বাবাতহুম মুছীবাতুন; ক্বা-লূ ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাহি রা-জিউ'ন।


১৫৭. উলা-ইকা আ'লাইহিম সালাওয়া-তুম্ মির্রাবি্বহিম ওয়ারাহমাতুন; ওয়া উলা-ইকা হুমুল মুহ্তাদুন।
১৫৮. ইন্নাছ্ ছাফা-ওয়ালমারওয়াতা মিন শাআ'ইরিল্লাহি; ফামান হাজ্জাল বাইতা আওয়ি'তামারা ফালা-জুনাহা আ'লাইহি আইঁয়্যাত্তাওয়্যাফা বিহিমা-; ওয়ামান তাত্বাওয়্যাআ' খাইরান; ফাইন্নাল্লা-হা শা-কিরুন আ'লিম।
(সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৫-১৫৮)

অনুবাদ
১৫৫. আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব। কখনো ভয়ভীতি, কখনো ক্ষুধা-অনাহার, কখনো বা তোমাদের জানমাল ও ফল-ফসলের ক্ষতিসাধন করে পরীক্ষা করা হবে; আপনি ধৈর্যশীলদের জন্য সুসংবাদ দান করুন।
১৫৬. যখন তাদের ওপর মুসিবত এসে পড়ে তখন তারা বলে, আমরা তো আল্লাহর জন্য, আমাদের তো তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।
১৫৭. এরা হচ্ছে সেসব মানুষ, যাদের ওপর আল্লাহর দয়া ও করুণা রয়েছে, আর এরাই হচ্ছে সুপথপ্রাপ্ত।
১৫৮. অবশ্যই 'সাফা' ও 'মারওয়া' পাহাড় আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম। অতএব যে ব্যক্তি হজ বা ওমরা পালন করে তাদের জন্য পাহাড়দ্বয়ের মাঝে তাওয়াফ করাতে দোষের কিছু নেই; যদি কোনো ব্যক্তি নিষ্ঠার সঙ্গে কোনো ভালো কাজ করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা নিঃসন্দেহে কৃতজ্ঞদের প্রতিদানদাতা এবং জ্ঞানী।

ব্যাখ্যা
আল্লাহ তায়ালা ইহজাগতিক নানা অবস্থা ও ক্রিয়াকর্মের ভেতর দিয়ে মানুষের পরীক্ষা নেন। পরীক্ষার কাজগুলো ঘটে তাঁর প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েই। যারা এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তারা উত্তম, আর যারা উত্তীর্ণ হয় না তারা অধম। ১৫৫ নম্বর আয়াতে পরীক্ষার কতগুলো বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো, ভয়ভীতি, ক্ষুধা-দারিদ্র্য এবং জান-মাল ও ফল-ফসলাদির ক্ষয়ক্ষতি। ভয়ভীতির কথাই উল্লেখ করা হয়েছে প্রথমে, অর্থাৎ জীবনের সবচেয়ে বড় চাওয়া শান্তি। নানা কারণে শান্তি বিঘি্নত হয়ে ভয়ভীতির পরিবেশ মানুষের সামনে আসে। যুদ্ধে শত্রুর ভয়, জীবনের প্রতিকূল পরিবেশে কত রকমের ভয়ভীতিই মানুষের সামনে আসে। এরপর অনাহার-দারিদ্র্য ও জীবনোপকরণের কত রকমের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা বা আশঙ্কা মানুষের সামনে আসে। এসব পরিস্থিতি যারা আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে, তাদের জন্য আল্লাহ তাঁর রাসুলকে সুসংবাদ দানের কথা বলেছেন। সুসংবাদ এ জন্য যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারা শান্তি ও সম্মানের অধিকারী হবেন এবং অনন্ত ভবিষ্যতে তাঁদের পরিণতি হবে শুভ। ১৫৬ ও ১৫৭ নম্বর আয়াতে এসব উত্তম ও সৌভাগ্যবান মানুষের কথাই বলা হয়েছে। তাঁদের সুদৃঢ় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও জীবনধারার ইতিবাচক পরিণতির কথা তুলে ধরা হয়েছে, আয়াত দুটিতে বলা হয়েছে- এরাই সুপথপ্রাপ্ত।
১৫৮ নম্বর আয়াতে ঐতিহাসিক সাফা-মারওয়া পাহাড়ের গুরুত্ব বর্ণনা করে হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য তা তাওয়াফ করা বা সায়ি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখানে সাফা-মারওয়া তাওয়াফের নির্দেশ দেওয়া হয়নি, তবে অনুমতি প্রদানের ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলামের আবির্ভাবের আগেও সাফা-মারওয়ায় সায়ি করার রেওয়াজটি প্রচলিত ছিল। তাই অনেক মুসলমানের মনেও প্রশ্ন ছিল, এটি জাহেলি যুগের রেওয়াজ কি না। এই আয়াতের দ্বারা সেই সন্দেহ খণ্ডন করা হয়েছে। আর ওই কাজটির কথা এভাবে বর্ণিত হওয়ার ফলে এটা ফরজ, ওয়াজিব নাকি মুস্তাহাব- এ নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতভেদ আছে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে, এটি ওয়াজিব, ইমাম আহম্মদ (রহ.)-এর মতে মুস্তাহাব আর ইমাম শাফেয়ি ও খালেদ (রহ.)-এর মতে ফরজ।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.