সাগরতলের দুনিয়া by মারুফ ইসলাম

সাগরে ডুব দিতে হয়নি, তবু সাগরতলের সেই অপূর্ব জগৎ দেখার সুযোগ মিলেছে রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে। আলোকচিত্রী শরীফ সারওয়ারের ক্যামেরায় তোলা বঙ্গোপসাগরের তলদেশের ৪৩টি ছবি নিয়ে ১৫ থেকে ১৮ জুন এই গ্যালারিতে হয়ে গেল এক প্রদর্শনী। এরই সুবাদে সুযোগ মিলল এমন দুর্লভ জগৎ দেখার।


১৫ জুন, বিকেল চারটা। ফিতা কেটে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আইইউসিএনের আবাসিক প্রতিনিধি ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ। তাঁকে সঙ্গ দিলেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিউদ্দিন আহমেদ।
প্রথম দিনেই গ্যালারিজুড়ে দারুণ দর্শকসমাগম। তরুণ-যুবক-প্রবীণদের সঙ্গে এসেছে শিশু-কিশোরও। ‘সমুদ্রের নিচের জগৎ এত অসাধারণ! এত সুন্দর সুন্দর প্রবাল আছে আমাদের বঙ্গোপসাগরের নিচে! এই প্রদর্শনীতে না এলে তা হয়তো জানাই হতো না।’ এমন অভিব্যক্তি বারিধারা থেকে আসা ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী প্রমার। প্রমা এসেছে তার বড় বোন সুরাইয়ার হাত ধরে। সুরাইয়ার কণ্ঠেও একই মুগ্ধতা, ‘এত দিন সমুদ্রের নিচের জগৎ দেখেছি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের পর্দায়। আর আজ দেখছি আলোকচিত্র হিসেবে। এই নতুন রূপে দেখার অনুভূতিও কম রোমাঞ্চকর নয়।’
হূদি এসেছে বাবার সঙ্গে। এক-একটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে তার অপার কৌতূহল: ‘এইটা কী, বাবা?’ ‘এই মাছটা এমন কেন?’ ‘শৈবাল কি খাওয়া যায়?’ হূদির প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে বাবা ক্লান্ত, কিন্তু তার বিস্ময় যেন কাটতেই চায় না।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছেন নিশাত শারমিন। ক্লাস শেষে এই পথ দিয়েই বাসায় ফিরছিলেন তিনি। দৃকের সামনে ‘প্রথম আন্ডার ওয়াটার ফটো প্রদর্শনী’ লেখা সাইনবোর্ড দেখে অনেকটা কৌতূহলের বশেই ঢুকে পড়েন ভেতরে। তার পরই যেন তাঁর সামনে খুলে যায় এক অন্য রকম জগৎ। বললেন, ‘আমার ধারণাই ছিল না, সমুদ্রের নিচের প্রাণিজগৎ এত বৈচিত্র্যে ভরা! আগামীকাল বন্ধুদের নিয়ে আবার আসব আমি।’
প্রদর্শনী সম্পর্কে শরীফ সারওয়ার বলেন, ‘আমি বঙ্গোপসাগরের পানির নিচে ৪৫ ফুট পর্যন্ত গিয়েছিলাম। সমুদ্রের নিচের দৃশ্য যে এত নয়নাভিরাম, তা নিজে না দেখলে কখনো বিশ্বাস করা যায় না। আমি চেষ্টা করেছি, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেই রোমাঞ্চকর জগৎ সবার সামনে তুলে ধরতে।’

No comments

Powered by Blogger.