সরকার কি নির্বাচনী অঙ্গীকার ভুলে গেছে?-দুর্নীতির ব্যাপকতা

গত শনিবার ঢাকায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সদস্যদের বার্ষিক সভা শেষে প্রকাশিত ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে দেশে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে, তাতে দলটির ঘোষিত প্রথম পাঁচ অগ্রাধিকারের অন্যতম ছিল দুর্নীতি দমন।


নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল:
‘দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদ বিবরণ দিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরের ঘুষ, দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয়, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালো টাকা ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ ও নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জনগণ আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার পর সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্নীতি দমনে এই সরকারের সেসব নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের প্রয়াস তেমন লক্ষ করা যায়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো হয়নি; দুর্নীতি দমনের উদ্যোগই বস্তুত নেই। উল্টো বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিরুদ্ধে। দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর মতো একটি বিরাট প্রকল্প অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রেলওয়েতে লোক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি চাক্ষুষ হয়ে উঠেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের বড় প্রকল্পগুলোতেও বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। তা ছাড়া, সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকায় দুর্নীতি ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে গেছে বলেও অভিযোগ আছে। জনপ্রশাসনে নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি, বদলি ইত্যাদি নিয়ে দুর্নীতি কিছুমাত্র কমেনি। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালোটাকা ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি ছিল, এগুলো প্রতিরোধ ও নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এক সেমিনারে বলা হয়েছে, ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বাড়তি টাকা দাবি করেন বলে বাংলাদেশে লাখ লাখ নারী উদ্যোক্তা ট্রেড লাইসেন্স করান না। দুর্নীতির ব্যাপকতার এটি একটি দৃষ্টান্ত মাত্র; জনপ্রশাসনে এ রকম দৃষ্টান্তই বেশি। বরং দুর্নীতি হচ্ছে না, এমন ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়াই দুরূহ।
সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। তাদের দাবি, দুর্নীতি যা কিছু হয়েছে, তা আগের সরকারের আমলে। দুর্নীতি দমন কমিশনের যেটুকু সাধ্য, তাতেও চলমান দুর্নীতি দমনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় অতীতে সংঘটিত দুর্নীতি প্রতিকারের বিষয়গুলো। টিআইবির শনিবারের ঘোষণাপত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ও সুপারিশ রয়েছে। সরকারের উচিত সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজেদের ঘোষিত অঙ্গীকার অনুযায়ী সক্রিয় হওয়া। তবে সবকিছুর আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

No comments

Powered by Blogger.