সংবর্ধনা-পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হও

যোগ্যতা অর্জন করেই ধাপে ধাপে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ইচ্ছা, পরিশ্রম ও সততা থাকলে শত প্রতিকূলতার মাঝেও সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মানসিকতা এখন থেকেই গড়ে তুলতে হবে—কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে গুণীজনেরা এসব কথা বলেন।


তাঁরা আরও বলেন, পড়াশোনার প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। জীবনে সততা, সাহস আর দায়িত্বশীলতার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। দেশের জন্য মঙ্গলকর যেকোনো কাজে নিঃসংকোচে এগিয়ে আসতে হবে তোমাদের।
প্রথম আলোর আয়োজনে ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবি) সহযোগিতায় গতকাল সোমবার সিরাজগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা ও বরগুনা—এই তিন জেলায় এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতে প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা সার্বিক সহযোগিতা করেন। অনুষ্ঠানের প্রচার সহযোগী মাছরাঙা টেলিভিশন, এবিসি রেডিও ও প্রথম আলো অনলাইন ডটকম।
ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
সিরাজগঞ্জ: শহরের শহীদ এম মনসুর আলী মিলনায়তনে সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এখানে জেলার এক হাজার ২০০ মেধাবী শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সিরাজগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক এনামুল হক। ইচ্ছা থাকলে শত কষ্টের মাঝেও সফল হওয়া সম্ভব—উপস্থিত সবাইকে নিজের সংগ্রামমুখর জীবনের গল্পের কথা শোনান অদম্য মেধাবী আমেনা খাতুন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. রকিবুল ইসলাম খান বলেন, ভালো ফলের অনুপ্রেরণা জোগায় সংবর্ধনা। এটি দেশের জন্য মেধাবীদের দায়িত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ছাত্রত্ব কখনো শেষ হয় না। ভালো ছাত্র হওয়ার চেষ্টার সঙ্গে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার চেষ্টা থাকতে হবে সব সময়। তিনি বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা যাতে সুশিক্ষা পায়, সে জন্য সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক টি এম সোহেল, অধ্যক্ষ মূসা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সিরাজগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মো. মনিরুল ইসলাম, শিক্ষক রাবেয়া তাপসী বসরী, সিরাজগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি রামচন্দ্র সাহা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জেলার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বি এল সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুস সালামের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। আলোচনা সভার পর গান গেয়ে শোনান ক্লোজআপ ওয়ান তারকা শিল্পী কিশোর, চ্যানেল আইয়ের ক্ষুদে গানরাজ নিঃশব্দ, গায়ক কাঞ্চন এবং সিরাজগঞ্জ বন্ধুসভার শিল্পীরা।
চুয়াডাঙ্গা: শিল্পকলা একাডেমীর শ্রীমন্ত টাউন হল মিলনায়তনে গতকাল জেলার ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ঘুষ, দুর্নীতি ও মাদককে ‘না’ বলে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি শাহ আলম। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সজল কান্তি মণ্ডল বলেন, ‘সাফল্যের ধারাবাহিকতা রাখা খুবই জরুরি। এইচএসসিতে পড়াশোনার প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের প্রচুর বই পড়ার পরামর্শ দিয়ে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বইয়ের বিষয়বস্তু বোঝার চেষ্টা করতে হবে।’ চুয়াডাঙ্গার সরকারি আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এস এম ইস্রাফিল বলেন, এইচএসসিতে পড়াশোনার জন্য খুব কম সময় পাওয়া যায়। কিন্তু এর ফলাফলের ওপর উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। সে জন্য শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক জাফর আহমদ বলেন, ‘তোমরা নিজেদের মুখ উজ্জ্বল করো, তাহলে দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল হবে।’
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খোন্দকার আলাউদ্দিন আল আজাদ, পৌর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শাহাজাহান আলী, চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজুল হোসেন, ভি জে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান, ইউসিবি চুয়াডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপক আশফাক আহমেদ।
পরে সাংস্কৃতিক আয়োজনে গান গেয়ে শোনান বন্ধুসভার সদস্য সৌম্যজিতা, নৃত্য পরিবেশন করেন মেহেরপুর বন্ধুসভার সদস্য সোহাগ। এ ছাড়া কবিতা আবৃত্তি করেন কৃতী ছাত্রী আল বুশরা ও উম্মে সুমাইয়া ।
বরগুনা: শহরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্স মিলনায়তনে জেলার ছয়টি উপজেলার ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩৫০ জন কৃতী শিক্ষার্থীকে গতকাল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বেলা ১১টায় নন্দন আর্ট কালচারের শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর বরগুনার নিজস্ব প্রতিবেদক এম জসীম উদ্দীন। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল গান ও নৃত্য পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানে বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রাজিয়া বেগম বলেন, ‘পরিশ্রম কখনো বিফলে যায় না। তোমাদের এই অধ্যবসায় আগামী দিনেও ধরে রাখতে হবে।’ নিজের মেধাকে দেশের সেবায় কাজে লাগানোর জন্য শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেন প্রথম আলোর উপ-ফিচার সম্পাদক পল্লব মোহাইমেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আমতলী এ কে পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়াজ মোর্শেদ, পাথরঘাটা তসলিমা মেমোরিয়াল একাডেমির প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার আজাদ, কৃতী শিক্ষার্থী রাফসান জাহান।
অনুষ্ঠানে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মাননা দেওয়া হয় পাথরঘাটা তাসলিমা মেমোরিয়াল একাডেমিকে।
বাংলাদেশ বেতারের শিল্পী ইফতেখার শাহিন ও বন্ধুসভার বন্ধু সুমাইয়া অনুষ্ঠানে গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন।

No comments

Powered by Blogger.